বরিশাল বিএনপির নতুন কমিটিতে পুরানোদের নিয়ে গুঞ্জন

খান রুবেল, বরিশাল
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ১৫:০৬

বিএনপির লোগো
অনেক দিন ধরেই গুঞ্জন ছিল বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি ভাঙনের বিষয় নিয়ে। অবশেষে সেই গুঞ্জনই সত্যি হল। দীর্ঘ দিনের সমালোচিত মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।
গত ১৩ জুন বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্র দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি ভাঙার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর পরই দলের নেতাকর্মীদের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সেই আলোচনায় উঠে আসছে দলের যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার এবং বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউদ্দিন সিকদারসহ পুরানো কমিটির বেশ কয়েকজনের নাম। আবার বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সফলতা এবং ব্যর্থতা নিয়েও চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
দলের একাংশের নেতাদের অভিযোগ, ব্যর্থতার দায় নিয়েই বিদায় নিতে হয়েছে মনিরুজ্জামান ফারুক ও মীর জাহিদুল কবির জাহিদের নেতৃত্বাধীন মহানগর কমিটির নেতাদের। তবে গত দুই বছরে সংগঠন পরিচালনায় সার্বিকভাবে সফল বলে দাবি বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি ঘোষণা হয় বরিশাল মহানগর বিএনপির ৪২ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি। মনিরুজ্জামান খান ফারুককে আহবায়ক ও মীর জাহিদুল কবির জাহিদকে সদস্য সচিব করে তিন মাস মেয়াদী এই কমিটি পার করেছে দুই বছর ৪ মাস।
দায়িত্বকালিন সময় সংগঠন পরিচালনা করতে গিয়ে দলীয় কর্মসূচির নামে চাঁদাবাজি, বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, এমনকি অনুষ্ঠানের মঞ্চে প্রকাশ্যেই কমিটির নারী নেতৃত্বে লাঞ্চিত করাসহ নানাভাবেই সমালোচিত হন মহানগর বিএনপির আহবায়ক এবং সদস্য সচিবসহ তাদের অনুসারী নেতারা।
সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালিন বিএনপির টানা আন্দোলন সংগ্রামে মহানগর বিএনপির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের নেতারা। নাটকীয় আন্দোলনের মাধ্যমে আটক হয়ে একাধিক মামলায় জড়িয়ে পড়েন কমিটির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক। সেই মামলায় পুরো আন্দোলনের সময়জুড়েই কারাগারে থাকতে হয় তাকে।
তবে গোটা আন্দোলনেই রহস্যজনক ভূমিকায় ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ। গ্রেপ্তারের ভয়ে আন্দোলনের পুরো সময়জুড়েই আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। এমনকি আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা-মামলা এবং কারাবরণ করা নেতাকর্মীদের খোঁজও নেননি মীর জাহিদ। এসব কারণে মহানগর বিএনপির কার্যক্রম নিয়ে নেতাকর্মীদের ক্ষোভ আর বেড়ে যায়।
গত সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দল থেকে বহিষ্কার হন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক জাবের আব্দুল্লাহ সাদী। তার ভাষায় বিলুপ্ত হওয়া মহানগর বিএনপির কমিটি এযাবতকালের সর্বাধিক বিতর্কিত কমিটি। বিলুপ্ত কমিটির নেতারা দায়িত্বে থাকাবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ-স্ক্যান্ডাল উঠেছে তা ইতিপূর্বে কোন কমিটির ক্ষেত্রেই হয়নি। এরা সংগঠন পরিচালনায় ব্যর্থ বলে দাবি এই নেতার।
তবে আন্দোলনে ব্যর্থ হলেও সংগঠন পরিচালনায় সফলতার দাবি বিলুপ্ত কমিটির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য জাহিদুল ইসলাম রিপন।
তিনি বলেন, বর্তমান কমিটি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছে। এসময়ের মধ্যে দলীয় এবং জাতীয় যেসব কর্মসূচি পালন করেছে তার প্রত্যেকটিতেই ছিল সফলতা। রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক চাপ উপেক্ষা করেও শহরে সর্বোচ্চ গণজমায়েত করে যেসব কর্মসূচি পালন করেছে সেগুলো নজিরবিহীন। তাছাড়া মহানগর বিএনপির অধীনস্থ ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করাকেও বড় ধরনের সফলতা বলে মনে করছেন রিপন।
যদিও ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠন কার্যক্রম নিয়েও বিতর্কে জড়াতে হয় মহানগর বিএনপির নেতাদের। যোগ্য এবং ত্যাগী নেতাদের পাশ কাটিয়ে নিষ্ক্রিয়দের জায়গা করে দেওয়া হয় কমিটিতে। এ নিয়ে তৎকালীন সময় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিক্ষোভও করেন বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। তাছাড়া বরিশালের আন্দোলন জমে না ওঠার পেছনে বিতর্কিত ওয়ার্ড কমিটিকে দায়ী করছেন দলের একাংশের নেতারা।
এ প্রসঙ্গে বিলুপ্ত হওয়া মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, কমিটি বিলুপ্ত করা বা নতুন কমিটি করা একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা তিনি ভালো ভেবেই করেছেন। তবে সংগঠন পরিচালনায় ব্যর্থতা এবং সফলতার কথা যদি আসে তবে আমি বলবো ‘আমরা সফল’। আমরা কী করেছি তা সবাই দেখেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ঠিক কী কারণে মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হলো তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। তবে এটা দল পুনর্গঠনের একটি অংশ হতে পারে।
তিনি বলেন, যেই কমিটি ছিল সেটার মেয়াদ ছিল তিন মাসের। আহবায়ক কমিটি মূলত সম্মেলনের জন্য করা হয়। মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি সুন্দর একটা সম্মেলন করতে পারতো। কিন্তু সেটা তারা করেনি বা করতে পারেনি। হয়তো কেন্দ্র মনে করেছে তাদের দিয়ে সংগঠন গোছানো সম্ভব নয়, তাই ভেঙে দিয়েছে।
এদিকে কমিটি বিলুপ্তির পর পরই মহানগর বিএনপি পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা আরো জোড়ালো হয়ে উঠেছে। সেই আলোচনায় উঠে আসছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের নামটিও। জ্যেষ্ঠতা এবং দক্ষতার কারণে তাকেই পুনরায় মহানগর বিএনপির সভাপতি বা আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন দলের একাংশের নেতারা।
এছাড়া নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসার আলোচনায় রয়েছেন বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউদ্দিন সিকদার। নির্বাচনকালিন আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তাছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিনের রাজনৈতিক সহচর হয়ে উঠেছেন জিয়া। যে কারণে কমিটিতে তার নামটিও সদস্য সচিব বা সাধারণ সম্পাদকের তালিকায় উঠে আসছে আলোচনায়। তিনি ছাড়াও একাধিক ব্যক্তির নাম উঠে আসছে নতুন কমিটির আলোচনায়।
আবারো মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আসার আলোচনা প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, কমিটি যখন বিলুপ্ত হয়েছে, তখন নতুন করে কমিটি হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সেই কমিটিতে আমি আসছি, বা আমাকে রাখা হচ্ছে তেমন কোন আলোচনা আমি শুনিনি। ভবিষ্যৎ আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দল যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই নেতৃত্ব দিবে।