স্বামী দ্বিতীয় সন্তান না চাওয়ায় নবজাতককে হত্যা করলেন মা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৪, ২৩:০৪

তৃষা আক্তার। ছবি: সংগৃহীত
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সাত দিন বয়সী নবজাতক সন্তানকে ৯ তলা থেকে ফেলে হত্যা করেছেন তার মা তৃষা আক্তার। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে তৃষা আক্তার জানান, তাদের একটি ছেলে সন্তান থাকতেও স্বামী দ্বিতীয় সন্তান চাইতেন না। সেই কারণেই তিনি এ ঘটনা ঘটান।
আজ মঙ্গলবার (১৮ জুন) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।
এদিকে নবজাতককে হত্যার ঘটনায় চিকিৎসক ওসমান গণি বাদী হয়ে স্ত্রী তৃষাকে একমাত্র আসামি করে ভৈরব থানায় হত্যা মামলা করেছেন। আসামি তৃষা বাদী চিকিৎসক ওসমান গণির দ্বিতীয় স্ত্রী। নিহত শিশুটির নাম তাসনিদ এহসান।
পুলিশ জানায়, শিশুটির বাবা উসমান গণি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তাঁর বাড়ি ভৈরব পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়ায়। তিনি দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী একজন চিকিৎসক, তিনি ঢাকায় থাকেন। সাড়ে তিন বছর আগে উসমান গণি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম তৃষা বেগম। তৃষার বাবার বাড়ি কুলিয়ারচরের ছয়সূতী গ্রামে। সাত দিন আগে তৃষা একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। গণি–তৃষা দম্পতির আরও একটি সন্তান রয়েছে। সন্তানদের নিয়ে তৃষা থাকেন ভৈরব পৌর শহরের নিউটাউন এলাকার একটি ফ্ল্যাটে। তাঁর সঙ্গে সব সময় থাকেন দুজন গৃহকর্মী ও তৃষার এক বান্ধবী। উসমান গণি সপ্তাহে এক দিন শুক্রবার ভৈরবের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন। তিনি এবার ঈদ করেন দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে।
ভৈরবের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, কুলিয়ারচরের নোয়াগাঁও এলাকার এনায়েত উল্লার মেয়ে তৃষা ভৈরবের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের নার্স ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তৃষার নামে ভৈরবে সেন্ট্রাল হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে। বিয়ের পরই তৃষা নার্সের চাকরি ছেড়ে দেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, এই দম্পতি ভৈরবের কমলপুর নিউটাউন এলাকার একটি এপার্টমেন্টের ৯ তলায় থাকেন। তাদের একটি ছেলে সন্তান থাকায় দ্বিতীয় সন্তান নিতে রাজি ছিলেন না চিকিৎসক ওসমান গণি। কিন্তু তৃষা দ্বিতীয় সন্তানের মা জন্ম দেন। এ নিয়ে প্রায়ই দাম্পত্য কলহ হতো বলে জানিয়েছেন তৃষা। সেই কারণেই তিনি আজ মঙ্গলবার ভোর রাতে ৯ তলা থেকে সাত দিনের শিশুটিকে ফেলে হত্যা করেছেন।
রাতে নবজাতক, নবজাতকের মা তৃষা, তৃষার বান্ধবী সুমাইয়া, গৃহকর্মী শিলা ও মিম এক কক্ষে ছিলেন। তৃষার তার স্বামী ছিলেন অন্য কক্ষে। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ঘুম থেকে উঠে তৃষা সন্তান নেই বলে চিৎকার করতে থাকলে সবাই খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। কোথাও না পেয়ে ভৈরব থানাকে জানানো হয়। আজ সকালে বাড়ির পাশের একটি ঝোপ থেকে পুলিশ শিশুটির মৃত উদ্ধার করেছে। শিশুর মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ময়নাতদন্তের জন্য শিশুটির মরদেহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে পুলিশ ওসমান গণি, স্ত্রী তৃষা, সুমাইয়া, গৃহকর্মী শিলা ও মিমকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর একপর্যায়ে তৃষা নিজেই শিশুটিকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দেন। ফলে তৃষাকে রেখে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।