Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

পয়ঃবর্জ্য ও প্লাস্টিকের আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ

Icon

তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ২১:১৬

পয়ঃবর্জ্য ও প্লাস্টিকের আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প। ছবি: লেখক

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওমনি প্রসেসরের মাধ্যমে বর্জ্য ও পরিত্যক্ত প্লাস্টিক থেকে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ওমনি প্রসেসর এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে মানুষের পয়ঃবর্জ্য এবং পচনশীল ও অপচনশীন প্লাস্টিকের ময়লা আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি এবং ছাই উৎপাদন করা হয়।

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। উৎপাদনে আসার ফলে বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। প্রকল্পে প্রতিদিন সাড়ে ১১ টন বর্জ্য ব্যবহার হচ্ছে। বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৪০-৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ, ১২শ লিটার ডিস্টিল্ড ওয়াটার এবং ১৫০০ কেজি ছাই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ ধরনের প্রকল্প চালু থাকলে পরিবেশ দূষণ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। 

উখিয়া-টেকনাফে অবস্থান করছে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের জন্য ধ্বংস করা হয় প্রায় ১২ হাজার একর বনভূমি। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর পয়ঃবর্জ্য এবং রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশের। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা করতে জরুরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ওমনি প্রসেসর) বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) সহায়তায় ২০২১ সালে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

ওমনি প্রসেসরের এই প্রযুক্তি আমাদের বাংলাদেশের জন্য প্রথম এবং বিশ্বে তৃতীয়। সেনেগাল এবং ভারতের পর এটি বাংলাদেশে স্থাপন করা হয়। প্ল্যান্টটি সম্পূর্ণ অটোমেটিক হওয়াতে এখানে ম্যান পাওয়ার খুবই কম লাগে। এ ছাড়া এটা চালাতে বাইরের কোনো বিদ্যুৎ লাগে না, নিজেদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকেই এটি চালানো হয়। প্রতি ঘণ্টায় এখানে ৬০-৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। 

 অপর একটি প্রযুক্তি হলো গ্যাসিফায়ার যেখানে অর্গানিক ও ইনঅর্গানিক ওয়েস্টেজ থেকে গ্যাস ইঞ্জিনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ এবং ছাই উৎপাদন হয়।

এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা প্রচুর। ছাই এবং বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আমাদের এখানে যে ছাই উৎপাদন হয় তা সিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটিকে বৃহৎ আকারে করা গেলে ন্যাশনাল গ্রিডে পাওয়ার সাপ্লাই করা যাবে। 

প্ল্যান্টটি সম্পূর্ণরূপে চালু রাখতে প্রতিদিন ৬ টন ফেকাল স্লাজ, ৫ টন জৈব বর্জ্য ও ৫০০ কেজি সিঙ্গেল লেয়ার প্লাস্টিক প্রয়োজন। যেহেতু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে সেহেতু প্রকল্পটিতে মাত্র ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করা সম্ভব হয়। ৬০-৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও এখন প্রতিদিন ৪০-৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ, এক হাজার থেকে ১২শ লিটার পানি এবং ১২শ থেকে ১৫শ কেজি ছাই উৎপাদন হচ্ছে। যদি পুরোপুরি প্রকল্পটি চালু করা যায় তবে এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাইরে সরবরাহ করার পাশাপাশি পানি বিক্রি করেই মাসিক ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব। একই সঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বর্তমানে এখানে প্রায় ১ লাখ মানুষ সরাসরি সম্পৃক্ত।

এটি একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি যার নানামুখী উপকারিতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ আমরা যদি প্লাস্টিক জ্বালিয়ে ফেলি তাহলে সেখান থেকে অনেক ক্ষতিকারক কার্বন ও গ্যাস পরিবেশে ছড়িয়ে পড়বে, যা পরিবেশসহ আমাদের সবার জন্য হুমকি। কিন্তু এখানে সেই প্লাটিক থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ায়। 

কক্সবাজারে প্রায় ১৪ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয়দের ব্যবহৃত প্লাস্টিক থেকে শুরু করে জৈব, অজৈব, পয়ঃবর্জ্য পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ প্রকল্পে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য ব্যবহার হচ্ছে তাতে পরিবেশের ক্ষতি কিছুটা হ্রাস পাবে। এ ধরনের আরও একাধিক প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫