
দেশের পাহাড় সমৃদ্ধ মহেশখালী দ্বীপে আঙুর চাষ। ছবি: লেখক
আঙুর বিদেশি ফল হলেও বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই এই সুস্বাদু ফলটির চাহিদা খুব বেশি। আঙুর চাষ সম্পর্কে আমাদের দেশের চাষিদের তেমন কোনো ধারণা না থাকায় আবহাওয়া, মাটি ও বাণিজ্যিক চাষের জ্ঞানের অভাবসহ নানা কারণে বাংলাদেশে এ ফলটি চাষের আগ্রহ খুব একটা দেখা যায়নি। তাই সম্পূর্ণ আমদানির মধ্য দিয়ে আঙুরের চাহিদা পূরণ করা হয়।
তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু আঙুর চাষের উপযোগী জেনে স্বল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে যারা আঙুর চাষ করেছে তারা সফলতার মুখ দেখছে। আমাদের মাটি ও জলবায়ু আঙুর চাষের জন্য উপযোগী, প্রমাণ হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দু-চারটি আঙুর গাছ থাকলেও সেটা এখনো গুটিকয় পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
দেশের পাহাড় সমৃদ্ধ মহেশখালী দ্বীপে পরীক্ষামূলকভাবে আঙুর চাষ করে সফল হয়েছেন তরুণ স্কুল শিক্ষক ফয়জুল করিম ফয়েজ। তার এই আঙুরের বাগান দেখতে গিয়ে দেখি সবুজ পাতায় আচ্ছাদিত মাচার নিচে থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর। দেখতে আসা মানুষজনকে তিনি বাগান থেকে আঙুর তুলে খাওয়াচ্ছেন। দর্শনার্থীরা জানায়, এ বাগানের আঙুর খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু।
ফয়েজ জানান, প্রতিবেশী দেশ ভারতের পরিচিত এক চাষির পরামর্শে ২০২৩ সালে ভারত থেকে সবুজ জাতের ত্রিশটি আঙুর গাছের চারা সংগ্রহ করেন। এরপর পাহাড় ও পুকুরের তলার মাটি দিয়ে উঁচু জমিতে বাঁশ ও সিমেন্টের পিলার দিয়ে মাচা তৈরি করে গাছ রোপণ করেন। আঁশযুক্ত লালমাটি, জৈবিক সার সমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙুর চাষ ভালো হয়। জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে যেখানে পানি দাঁড়িয়ে থাকবে না এবং প্রচুর সূর্যের আলো পড়বে এমন জায়গা আঙুর চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। রোপণের আট মাসের মধ্যে গাছে ফলন আসে। এই গাছ থেকে কলম পদ্ধতিতে পাঁচ শতাধিক চারা উৎপাদন করে মহেশখালী দ্বীপের মানুষকে তিনি আঙুর চাষে উৎসাহিত করছেন। ইতোমধ্যে লক্ষাধিক টাকার চারা বিক্রি করেছেন। চারা রোপণ করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ নিজে গিয়ে মাটি তৈরি, সার প্রয়োগসহ সকল কাজে সহযোগিতা করছেন। ফয়েজের লক্ষ্য, দ্বীপের মানুষ যেন কেমিক্যালমুক্ত আঙুর খেতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। তারপর নিজ জেলা ও সমগ্র বাংলাদেশে আঙুর চাষ ছড়িয়ে দেওয়া।
মহেশখালী উপজেলা কৃষি অফিস থেকে লোকজন এসে আঙুর বাগান দেখে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। ইতোমধ্যেই আরও কয়েক জাতের চারা সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষের কাজ শুরু করেছেন। দেশের যে কেউ চাইলে ফয়েজ থেকে চারা সংগ্রহ করে আঙুর চাষ করতে পারবেন, সব ধরনের সহযোগিতা তিনি দেবেন। আঙুর অতিলতানো গাছের ফল। কেউ চাইলে টব, ব্যাগ ব্যাবহার করে ছাদে চাষ করতে পারবে। একটি আঙুর গাছ কমপক্ষে ত্রিশ বছর ফল দেয় বছরে দুবার করে।
যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, চীন, ফ্রান্স, স্পেন, তুরস্ক, ইরান, চিলি, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোতে আঙুর সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হলেও ফলটি প্রায় সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়। আমাদের দেশেও আঙুর চাষে বিপ্লব ঘটুক এই প্রত্যশা।