লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, দেখা দিয়েছে ভাঙন

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৪, ১৬:৪৪

তিস্তা নদীতে ভাঙন। ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি
উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে লালমনিরহাটে তৃতীয় দফা স্বল্প মেয়াদি বন্যা দেখা দেয়। তবে সোমবার সকাল থেকে পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। আর তিস্তায় বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার হাতিবান্ধা, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে।
তিস্তা ব্যারেজ বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ টানা তিন দিন ধরে বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও সোমবার সকাল থেকে তা কমতে শুরু করেছে। সোমবার সকাল ৬টায় পানির প্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচে এবং সকাল ৯টায় আরো কমে গিয়ে তা বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পরে একই পয়েন্টে বিকাল ৩টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৮০ মিটার। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) যা বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল থেকে এখনো পানি সরেনি। এখনো নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে মানুষ পানিবন্ধী হয়ে আছে। এখনো তলিয়ে আছে অনেক রাস্তাঘাট। কিছু বাড়ি ঘর থেকে পানি নেমে গেলেও ঘরে বাইরে জমেছে কাদা।
এদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্ট এবং জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চর গোবরর্ধন ও হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারন ভাঙন করেছে। এদিকে গত কয়েকদিনে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের দক্ষিণ গোবর্ধন চর এলাকার ১০টি বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে মসজিদ মন্দিরসহ অন্যান্য স্থাপনা। হুমকিতে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা।
এদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা ইতোমধ্যে তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত তিনদিনে এ ইউনিয়নের উত্তর ডাউয়াবাড়ি গ্রামের ২০টি পরিবারের আশ্রয়স্থল বসতভিটা বিলীন হয়েছে। তারা ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে রাখার মতো জায়গা না পাওয়ায় উত্তর ডাউয়াবাড়ি গ্রামে নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে অস্থায়ীভাবে বসতি গড়তে আলহাজ আছের মাহমুদ সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ ছেড়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা আপাতত বিদ্যালয় মাঠে করছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। তবে অনেকে জায়গা না পেয়ে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধের ধারে ঘরবাড়ি আসবাবপত্র স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ আবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল রায় জানান, সোমবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আর তিস্তার যে সকল পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সে সকল পয়েন্টে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।