
বস্তায় বালু ভরে বাঁধের ধসে যাওয়া স্থানে ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা।
আধো আলো, আধো ছায়া। একটু পরেই নেমে আসবে সন্ধ্যা। চুলায় বসানো হয়েছে রান্নার হাড়ি; ঠিক এমন সময় তিস্তা নদীর স্রোতের পানি ঘুরতে ঘুরতে ধসে যেতে থাকে বালুর বাঁধ। ভাঙতে থাকে ওই বাঁধের উপরে থাকা বসতভিটা। দ্রুত রান্না ও নাওয়া খাওয়া ছেড়ে শুরু হয় দৌড়াদৌড়ি- চিৎকার চেঁচামেচি। রাতের আঁধারে তড়িঘড়ি করে ঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় জিনিসপত্র। ভেঙে চুরে নিয়ে যাওয়া হয় ঘরের বেড়া ও চালের টিন। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন তাৎক্ষণিক ছুটে এসে কেউ সহযোগিতা করে ঘরের জিনিসপত্র ও বাড়িঘর সরাতে, আবার কেউ কেউ চেষ্টা করেন বস্তায় বালু ভরে বাঁধের ধসে যাওয়া স্থানে ফেলে ভাঙন ঠেকাতে। মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে চোখের সামনে ৫টি বসতভিটা চলে যায় তিস্তা গর্ভে। তবে স্থানীয় লোকজন টানা দুই ঘণ্টা অক্লান্ত স্বেচ্ছা শ্রমে বালুর বস্তা ফেলে প্রাথমিকভাবে ভাঙন ঠেকায়। ভাঙনের মুখ থেকে বেঁচে যায় শতাধিক বসতভিটা।
গতকাল বুধবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় বালুর বাঁধ ধসে গিয়ে ওই ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, ভাঙন কবলিত আদিতমারী উপজেলার ওই কুটিরপাড় এলাকার কয়েক কিলোমিটার তিস্তা তীরে ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গেল বছরের বন্যায় তিস্তায় পলি পড়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ওই কুটিরপাড় বাঁধ ঘেঁষে বয়ে যায়। পানির প্রবল স্রোত ধাক্কা খেয়ে যায় বাঁধে। একপর্যায়ে বুধবার সন্ধ্যায় নদীর স্রোতের পানি ঘুরতে ঘুরতে ধসে যায় বালুর বাঁধ। এসময় হুমকির মুখে পড়ে ভাটিতে থাকা সদ্য নির্মিত ৪৯ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ। সন্ধ্যা রাতেই নদীগর্ভে বিলীন হয় ৫টি বসতভিটা। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো রাতের আঁধারে তড়িঘড়ি করে ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে খোলা আকাশের নিচে স্তূপ করে রেখে সেখানেই রাত্রি যাপন করেন।
মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে কুটিরপাড় বাঁধ ঘেঁষে বয়ে যায়। প্রবল স্রোতের ধাক্কায় হুমকির মুখে ছিল বাঁধটি। সংস্কার জরুরি ছিল। পরে বালুর বাঁধের ভাঙন ও ধস শুরু হয়। তীব্র স্রোতে তীরে থাকা পাঁচটি পরিবারের ঘর-বাড়ি ও গাছপালা ভেঙে যায়। তাৎক্ষণিক তারা শেষ সম্বলটুকু উদ্ধার করে পাশে উঁচু বাঁধে স্থানে রাখে। রাতে বাঁধেই চুলা বসিয়ে রান্নার কাজ সেরে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান তারা। পাউবো থেকে পাওয়া খালি বস্তায় এলাকার লোকজন স্বেচ্ছা শ্রমে বালু ভরে বাঁধের ধসে যাওয়া স্থানে ফেলে প্রাথমিক অবস্থায় ভাঙন রোধ করেছেন।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার রায়কে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।