Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

লালমনিরহাটে বন্যায় নদী ভাঙনে নিঃস্ব সাধারণ মানুষ

Icon

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ১৮:১৯

লালমনিরহাটে বন্যায় নদী ভাঙনে নিঃস্ব সাধারণ মানুষ

নদী ভাঙনে বসতভিটা ও ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিস্তা ও ধরলা বেষ্টিত লালমনিরহাট জেলার পাঁচ উপজেলায় বন্যায় প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমির পরিমাণ মোট ৬৪.৬০ হেক্টর ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পরিবার ২১ হাজার ৮৫০ জন এবং মোট ক্ষতি ২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২৫ টাকা।

খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, বন্যার পানি নেমে গেলেও নদী ভাঙনে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে ভাঙন কবলিতরা। তারা কাজ না পেয়ে কর্মহীন  খাদ্য ও অর্থ সংকট পড়েছে। বন্যার্তরা গত ২০দিন যাবত  লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ এমন সংকটাপন্ন জীবন যাপন করছে।

আজ সোমবার (১৫ জুলাই) লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি দুপুর ১২টায় ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে বর্তমানে পানি কমে বিপৎসীমার ৬৮ সে.মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উজানের ঢলে ও ভারী বর্ষণে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বসতভিটা পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। এতে প্রায় দশ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে নদীর পানি কমলেও ভাঙন থামছে না। এই বানভাসী অধিকাংশ মানুষ শ্রমিক, দিনমজুর ও কৃষক। বন্যার মধ্যে কাজকর্ম না থাকায় বেকার বসে রয়েছে। একারণে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সংকটের কারণে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকেরা বিপাকে পড়েছে। গবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু আয়-রোজগার না থাকায় চিকিৎসাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারছে না বানভাসী এই অসহায় মানুষরা। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে নষ্ট হ‌ওয়ায় সংকটে দিনপার করছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।

সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিএফ চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষেরা। অন্যদিকে বন্যার সময় নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় তিস্তা পাড়ের মানুষের বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন।

সদর উপজেলার রাজপুর গ্রামের লাইজু হোসেন জানান, নানা সংকটে অসহায় হয়ে পড়েছি আমরা। সমস্যা আমাদের ঘিরে ধরেছে। আয় রোজগার নেই। খাবার কেনার টাকা নেই। পানির মধ্যে দিয়ে চলাচল করায় নারী-পুরুষ শিশু অনেকের হাত পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়াসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। এছাড়াও গবাদি পশু নিয়েও সংকটে রয়েছি। খাবার দিতে না পারায় গবাদিপশুগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনপার করতে হচ্ছে।

এদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। গত কয়েকদিনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৩০টি বাড়ি। অসহায় মানুষেরা জায়গা না পেয়ে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধের ধারে ঘরবাড়ি আসবাবপত্র স্তূপ করে রেখেছেন। সবচেয়ে বেশি ভাঙন এলাকা হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নে পানি নেমে যাওয়ায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। কৃষি জমি বালু দিয়ে ভরাট হয়েছে। রাস্তাঘাট বাঁধ সব ধসে গেছে। গত কয়েকদিনে কয়েক দফা পানি বৃদ্ধির ফলে এখন পর্যন্ত ১৪১টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সরকারি সহায়তা এখনো আমরা সবখানে পৌঁছাতে পারিনি।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, ১ম ও ২য় দফায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমির পরিমাণ মোট ৬৪.৬০ হেক্টর ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পরিবার ২১ হাজার ৮৫০ জন। সবমিলে মোট ক্ষতি ২ কোটি ৩৭লাখ ৩২৫ টাকা।

পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকায় ইতিমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের। তিস্তার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫