বরিশালে ৮ মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ১১০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৯

বরিশাল জেলার মানচিত্র
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় বরিশাল জুড়ে এখনো চলছে পুলিশের ধরপাকড়। গত ১৯ জুলাই দেশব্যাপি কারফিউ জারির পর থেকে শুরু হয় এ গণগ্রেপ্তার। এরই মধ্যে বরিশাল মহানগর এবং জেলায় এখন পর্যন্ত ১১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা সবাই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী।
এদের মধ্যে রয়েছে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান প্রমুখ। সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ নেতার দায়ের করা পৃথক আটটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গণগ্রেপ্তারের কারণে বিএনপি নেতাকর্মী শূন্য হয়ে পড়েছে গোটা জেলা ও মহানগরে। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গ্রেপ্তারের ভয়ে নিজ নিজ বাড়িতেও ঘুমাতে পারছেন না তারা। অনেকটা আতঙ্কের মধ্যেই দিন কাটছে তাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত বরিশালের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসময় ভাঙচুর করা হয় নগরীর নথুল্লাবাদ এবং হাতেম আলী কলেজ চৌমাথায় দুটি পুলিশ বক্স এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্প।
এছাড়াও পুলিশের একটি পিকআপ এবং একটি পণ্যবাহী ট্রাক, দুটি মোটরসাইকেল ও ১০টি সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। এসব ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আলী আশরাফসহ ২৮৯ জন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেলের তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ বাদী হয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ মামলা করে। এসব মামলায় ২ হাজার ৯৬০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও গত ২৩ জুলাই কোতয়ালী মডেল থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা গালাম সরোয়ার রাজিব। সেই মামলার প্রধান আসামি মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের দায়ের করা নাশকতার পাঁচটি মামলায় এখন পর্যন্ত ৮২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ৯ জন। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী।
অপরদিকে বরিশাল মহানগরীর বাইরে বাকেরগঞ্জ এবং নারীপাড়া থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ তুলে পৃথক দুটি মামলা। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ২৮ জন। এর মধ্যে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গ্রেপ্তার হন তিনজন।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) বিপ্লব কুমার মিস্ত্রি জানান, ‘মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিয়ামকে গোলাম সরোয়ার রাজিবের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এদিকে পৃথক সাতটি মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে দিন কাটছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। এ কারণে মূলদল এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে রয়েছে। বন্ধ রয়েছে তাদের মুঠোফোনও।
আলাপকালে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সাবেক এক সদস্য বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। সেই ইস্যু নিয়ে সরকার এখন বিএনপি দমনে ব্যস্ত। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে শুধু ঘর নয়, এলাকা ছাড়া করেছে। এমনকি প্রতি রাতেই নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদেরও হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এই নেতার।