বাংলাদেশি কৃষকের গরু আটক করে ভারতীয় দাবি বিজিবির

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১৩:৩২

স্থানীয়রা ক্যাম্পে গিয়েও গরুগুলো ফেরত আনতে পারেনি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশি কৃষকের ৪টি গরু অন্যায়ভাবে আটকের অভিযোগ ওঠেছে বিজিবির বিরুদ্ধে।
উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের টোকাপাড়া সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেন স্থানীয়রা। এই সীমান্ত ফাঁড়িটি নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটলিয়নের আওতাধীন।
গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় গরু ফেরতের দাবিতে স্থানীয়দেরকে বিজিবির ওই ক্যাম্পের সামনে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
তাদের অভিযোগ, গত সোমবার (২৯ জুলাই) এই ফাঁড়ির টহলদল ভারতীয় অবৈধ পথে আসা দাবি করে ৪ জন দরিদ্র কৃষকের ৪টি গরু আটক করে। পরে গরুগুলো ফেরত চাইলে উল্টো ভয়ভীতি দেখানো হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ক্যাম্পে গিয়েও গরুগুলো ফেরত আনতে পারেনি।
স্থানীয়রা জানান, পার্শ্ববর্তী হাড়িভাসা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম মাধুপাড়া। এই গ্রামের গৃহস্থ্যরা যুগযুগ ধরে সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশি ভূ-খণ্ডে গরু-ছাগল বেধে ঘাস খাওয়ান। গত সোমবার (২৯ জুলাই) বাংলাদেশি কৃষকদের গরু-ছাগল সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশি জমিতে ঘাস খাচ্ছিলেন। বিকেলের দিকে জমিতে গরু আনতে গিয়ে গৃহস্থ্যরা তাদের ৪টি গরু খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাতে সীমান্ত সংলগ্ন পাশের গ্রামে গরুগুলো খুঁজে পান। তবে সেগুলো আনার সময় বাধ সাধেন বিজিবি। গরুগুলো ভারতীয় দাবি করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায় বিজিবির টহল দল।
সীমান্ত গ্রাম মাধুপাড়ার হতদরিদ্র তসলিম উদ্দীন। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি বেসরকারি সংস্থা ‘ব্র্যাক’ থেকে একটি গরু পেয়েছিলেন লালন পালনের জন্য। সেই গরুটিও ভারতীয় দাবি করে বিজিবি ফাঁড়িতে নিয়ে গেছে- অভিযোগ তার।
তিনি বলেন, গরু ক্রয়ের রশিদসহ ‘ব্র্যাক’র কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বিজিবি আমার গরু ভারতীয় দাবি করছে। আমি গরিব মানুষ, গরুটাই আমার সম্বল।
বিপুল নামের আরেকজন বলেন, গরুগুলো খুঁজে পাচ্ছিলাম না সন্ধ্যা থেকে। রাত ৮ টার দিকে খবর পাই পাশের গ্রামে বিজিবি তিনটি গরু আটক করেছে। সেখানে গিয়ে নিশ্চিত হই গরুগুলো আমাদের। তখনও একটি গরু ধরতে পারেনি বিজিবি, আমাদের সহায়তায় সেটিও ধরা হয়। তাৎক্ষণিক গরুগুলো ফেরত চাইলে, আমাদের মেম্বারকে নিয়ে ক্যাম্পে যেতে বলে। ক্যাম্পে গেলে বিজিবি দাবি করে এগুলো ভারতীয় গরু, তাই জব্দ করা হয়েছে।
একই এলাকার শিমুল বলেন, আমাদের পালিত গরু ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে বিজিবি বলছে, এগুলো নাকি অবৈধপথে ভারত থেকে আসা গরু। গরুগুলো ফেরত না দিলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিউল আলম শফিক বলেন, বিজিবি যে ৪টি গরু আটক করেছে সেগুলো বাংলাদেশি কৃষকের পালিত গরু। গরুর গৃহস্থরা দরিদ্র মানুষ। গরুগুলো উদ্ধারের জন্য আমি এবং এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যাম্পে গিয়েছিলাম, বিজিবি আমাদের কথা শুনেনি। বিজিবি বলছে গরুগুলো চোরাকারবারিরা নিয়ে আসতেছিল, সেখান থেকে আটক করা হয়েছে। যদিও বিজিবির এই বক্তব্য সঠিক নয়। আমরা বিজিবিকে বলেছি সঠিকভাবে তদন্ত করতে, কারা গরুর প্রকৃত মালিক খুঁজে বের করতে। আমাদের কথা বিজিবি শুনেনি।
বিজিবির টোকাপাড়া বর্ডার আওটপোস্টের (বিওপি) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুঠোফোনে বলেন, গরুগুলো ভারতীয় এবং অবৈধপথে বাংলাদেশে আসছে এমন খবরে আমাদের টহলদল আটক করেছে। তারপরও আমরা যাচাই করবো এখানে বাংলাদেশি গৃহস্থের গরু আছে কি-না।