শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ।
খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টার ঘটনা ঘটেছে।
আজ বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর ২টা থেকে নগরীর সাতরাস্তা মোড় থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তারা রয়েল মোড়, শান্তিধাম, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, বাইতিপাড়া, মৌলভিপাড়া, পিটিআই মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড, অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে প্রায় ৬০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে শতাধিক শিক্ষার্থীকে।
খুলনা নগরীর ময়লাপোতা মোড় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরের এ ঘটনায় চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
নগরীর সাতরাস্তা মোড়ে বিক্ষোভকালে বেলা সোয়া দুইটার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি দুই দিক দিয়ে আটকে রাখে। এতে উত্তেজনায় এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ করে আন্দোলনকারীরা ময়লাপোতা মোড়ে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং আরেকটি গাড়ি ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এছাড়া ওই এলাকায় টহল দেয় পুলিশের দুটি ভারী যান।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা কেডিএ অ্যাভিনিউ দিয়ে রয়্যাল মোড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তারা দুটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে। কিছু শিক্ষার্থী দৌড়ে এদিক সেদিক পালিয়ে যায়, আর কিছু শিক্ষার্থী আহছান উল্লাহ কলেজের মধ্যে চলে যায়।
দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা নগরীর রয়্যাল মোড়ে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ রয়্যাল মোড় ও আশপাশের এলাকা থেকে কমপক্ষে ৩৫ জনকে আটক করে। পুলিশ ও বিজিবির কঠোর অবস্থানের কারণে আন্দোলনকারীরা রয়্যাল মোড়ে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। এছাড়া নগরীর শিববাড়ি মোড়েও বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।
আন্দোলনকারীরা জানান, সারাদেশে নিহত ছাত্রদের হত্যার বিচারের দাবিতে বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি ছিল। খুলনায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে বেলা ১১টায় রয়েল মোড়ে অবস্থান নগরীর সাতরাস্তা মোড়ে বিক্ষোভকালে বেলা সোয়া দুইটার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি দুই দিক দিয়ে আটকে রাখে। এতে উত্তেজনায় এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
দুপুর দেড়টার পরে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ডালমিল মোড় থেকে লাঠি নিয়ে মিছিল বের করে। পুলিশ আন্দোলনকারী ভেবে তাদের ধাওয়া দিলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে শেরেবাংলা রোড থেকে ছাত্রলীগের আরেকটি মিছিল ময়লা পোতা হয়ে সাত রাস্তার দিকে চলে যায়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ মিছিল নিয়ে রয়েল মোড়ে অবস্থান নেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানান, ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হয়েছে। কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা মঙ্গলবার রাতে খুলনা সার্কিট হাউসে বৈঠকের পর আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। কিন্তু কিছু সংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল যুবক বিশৃংখলা করার চেষ্টা করছে। সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।