বরিশালে প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে আগুন, আ.লীগ নেতা নিহত

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ২১:০৩
পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে মোটরসাইকেল, ভাঙচুর, আগুন।
বরিশালে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বিক্ষুব্ধরা। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ জন। পুলিশ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং আন্দোলনকারী শতাধিক আহত হয়েছেন।
এদিকে বিক্ষোভকালে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের বাসভবন, দুদক কার্যালয় এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়। পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে ২৫টির অধিক মোটরসাইকেল, ভাঙচুর করা হয় একটি অ্যাম্বুলেন্স।
পাল্টা জবাবে সদর রোডে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এসময় দলীয় কার্যালয়ের সামনে দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে সদর রোড এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
আজ রবিবার বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বরিশাল নগরীর নবগ্রাম রোড এবং সিএন্ডবি রোড এবং সদর রোড এলাকায় দফায় দফায় এই সংঘাত-সংঘর্ষ চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং ১০ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেট, রাবার বুলেট এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুটে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পাল্টা জবাবে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল এবং গুলাইবাশ দিয়ে মারবেল ছোড়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
নিহত আওয়ামী লীগ নিতার নাম মফিজুল ইসলাম টুটুল চৌধুরী। তিনি বরিশাল মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। নগরীর আমতলার মোড় বিজয় বিহঙ্গ এলাকার বাসিন্দা ছিলেন টুটুল চৌধুরী।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মুনির হোসেন সজিব জানান, ‘নিহত টুটুল চৌধুরীর মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আঘাতগুলো এমনভাবে করা হয়েছে যে মাথার খুলির ভেতরে থাকা অনেককিছুই বাইরে বের হয়ে গেছে। ধারনা করা হচ্ছে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ ও মাথায় আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ঘোষণা অনুযায়ী সরকার পতনের এক দফা দাবি নিয়ে রবিবার সকালে নগরীর নথুল্লাবাদ এবং হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। দুপুরের দিকে হঠাৎ করেই নগরীর বটতলা নবগ্রাম রোড এলাকায় বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের বাসভবন ‘বেগম ভিলা’ এবং এর কাছেই দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ে হামলা ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা।
একপর্যায় তারা প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের বাসভবন এবং আসে পাশের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এমনকি প্রতিমন্ত্রীর বাড়ির নিচলতায় পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এতে প্রতিমন্ত্রীর বাড়ির চেয়ার-টেবিল এবং বিভিন্ন আসবাবপত্র ছুড়ে যায়। এমনকি প্রতিমন্ত্রীর বাড়ির ভেতরে এবং বাড়ি সংলগ্ন সড়কে ২০টির অধিক মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা।
প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিমন্ত্রীর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ‘যারা প্রতিমন্ত্রী এবং তাদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের একজনকেও ছাত্র মনে হয়নি। তারা সবাই বয়স্ক ছিল। ঘটনার সময় ভবনের ভেতরে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বাড়ির ওপর তলায় আশ্রয় নেয়।
অপরদিকে, সকাল থেকে ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও তাদের বেরিকেট ভেঙে দুদক কার্যালয়ে হামলা ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। এসময় প্রাণ বাঁচাতে কার্যালয়ের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেন দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দুদক কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। এসময় বিক্ষুব্ধরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। তারা ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মফিজুল ইসলাম টুটুল চৌধুরীকে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তাকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, টুটুল চৌধুরী অটোরিকশায় বসে নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছোড়ে। এ ঘটনার পর পরই তার ওপর লাঠিসোঁটা এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে বিক্ষুব্ধরা।
এর আগে বেলা সাড়ে ১২টায় নগরীর সদর রোডে বিএনপির জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। পাল্টা হিসেবে নগরীর সিএন্ডবি এলাকায় থাকা আওয়ামী লীগের একটি অফিস জ্বালিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।
এদিকে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক দখলে রেখেছে শিক্ষার্থীরা। চৌমাথা এলাকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এক পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেল এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স। এছাড়া নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন আন্দোলনকারীরা। রবিবার বেলা ১২টার দিকে নগরীর সিএন্ডবি রোড কাজিপাড়া এলাকার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে এ কার্যালয়টি ভাঙচুর করা হয়। এসময় কার্যালয়ের ভেতরে থাকা আসবাবপত্র ভাঙচুর করে সড়কের ওপর এনে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। তবে তখন ওই কার্যালয়টি তালাবদ্ধ থাকায় কেউ হতাহত হয়নি।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে নগরীর সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের প্রথম গেট থেকে শিক্ষার্থীরা গণমিছিল বের করে। মিছিলের অগ্রভাগে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব আফরোজা খানম নাসরিনসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়।