
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। ছবি: সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত এবং কারফিউয়ের কারণে বিপর্যস্ত দেশের পর্যটন খাত। লোকসানে পড়েছেন ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল-মোটেল রেস্তোরাঁসহ সংশ্লিষ্ট শতাধিক খাতের উদ্যোক্তারা। বিদেশি পর্যটকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। করোনা মহামারির পর আবার বড় ধাক্কা পর্যটন খাতে। এতে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) অনুযায়ী, প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পর্যটন খাতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড় দিয়েও পর্যটক টানতে পারছে না হোটেল-রিসোর্টগুলো। সাধারণত যে কোনো দুর্যোগে সবার আগে প্রভাব পড়ে পর্যটন খাতে, আবার এ খাত পুনরুদ্ধারও হয় সবার পরে। ফলে পুরো খাত এখন বিপদগ্রস্ত। গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি, ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
কক্সবাজারে পর্যটক না থাকায় পর্যটননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমেছে ধস। কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল খালি পড়ে রয়েছে। বিক্রি নেই তিন হাজারের বেশি দোকান ও পাঁচ শতাধিক রেস্তোরাঁয়। সমুদ্রসৈকতের আশপাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটও বন্ধ হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ২০ জুলাই থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৮ দিনে কক্সবাজারের পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। কারফিউ শিথিলের পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
সিলেটে গত দুই মাসের ব্যবধানে তিন দফা বন্যার ক্ষতির ধাক্কা কাটানোর আগেই আবারও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পর্যটন খাত। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সৃষ্ট সংঘাতে পর্যটকহীন হয়ে পড়েছে সিলেট। অথচ এই বর্ষা মৌসুমেই সিলেটে সবচেয়ে বেশি পর্যটক ভিড় করেন। শ্রীমঙ্গল চায়ের রাজ্য হিসেবে পরিচিত। এখানকার সারি সারি চা-বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য ও দর্শনীয় স্থান মুগ্ধ করে পর্যটকদের। তাই সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর পর শ্রীমঙ্গলে কমতে শুরু করেছিল পর্যটকের সংখ্যা। গত প্রায় ১০ দিনে নতুন করে কোনো পর্যটক আসেননি। আগে যেসব পর্যটক এসেছিলেন তারা ফিরে গেছেন। এখন শ্রীমঙ্গলে পর্যটক নেই বললেই চলে।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে সারা বছরই কমবেশি পর্যটকের আনাগোনা থাকে। এতে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা চাঙ্গা থাকে। তবে গত কিছুদিন সৈকতটিতে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। পর্যটকের উপস্থিতি একেবারেই কমে গেছে; খালি পড়ে আছে হোটেল-মোটেল। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের প্রভাব পড়েছে; স্থবির হয়েছে পড়েছে পর্যটন ব্যবসা।
এ ছাড়া দেশে বেড়ানোর জনপ্রিয় গন্তব্য হচ্ছে বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সুন্দরবনের রিসোর্টগুলো বসে আছে কাজ ছাড়া। দেশের মধ্যে পর্যটনের নতুন গন্তব্য সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। এখানে হাউসবোটে ভ্রমণ করতে আসেন পর্যটকরা। বছরে মূলত চার মাস বাণিজ্য হয় এখানে। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে জুলাই ও আগস্টে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন এখানে। এবার সব বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন হাউসবোট উদ্যোক্তারা। তিন শতাধিক হাউসবোট আছে এখানে। টাঙ্গুয়ার হাওরে পাঁচটি হাউসবোট পরিচালনা করে অভিযাত্রিক। এ সংস্থার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা নেহার সারওয়ার বলেন, বন্যার কারণে জুনে পর্যটক আসেননি। আর জুলাইয়ে সব বাতিল হয়েছে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে। এখন তো নতুন বুকিং হচ্ছে না। আগস্টের বুকিংও বাতিল করছেন কেউ কেউ।
টোয়াবের সাবেক সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, করোনা মহামারির ধাক্কা মোটামুটি কাটিয়ে ওঠার পর এখন নতুন করে বড় ধাক্কা এসেছে পর্যটন খাতে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ বাতিলের বিষয়ে আলোচনা করা যায়নি। আগে থেকে বুকিং করা সব ট্রিপ বাতিল হয়েছে। নতুন করেও কেউ ট্রিপ বুকিং করছে না। তিনি বলেন, করোনার প্রভাবে টানা দুই বছর মন্দা ছিল পর্যটন খাতে। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণের প্রথম বছর কার্যত বন্ধ ছিল পর্যটন। এরপর গত দুই বছরে করোনার ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই। এখন দেশের চলমান পরিস্থিতি আবার অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।