গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর দাবিতে দলটির নেতাকর্মীর বিক্ষোভ থেকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করা হলে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় সেনাসদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।

আজ শনিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী শনিবার ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশে গাড়ি আটকা পড়ে। খবর পেয়ে গোপালগঞ্জে কর্মরত সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। এক পর্যায়ে সেনাসদস্যদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান তারা। বিকেল ৫টার দিকে সেনাসদস্যরা তাদের সড়ক থেকে সরতে বললে ক্ষিপ্ত হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করেন সেনাসদস্যরা। এ সময় নেতাকর্মীরা সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে ভাঙচুর শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের হামলায় চার সেনাসদস্য আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাসদস্যরা গুলি করেন। কেউ মারা না গেলেও দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সেনাবাহিনীর গোপালগঞ্জ ক্যাম্পের লে. কর্নেল মাকসুদুর রহমান বলেন, সদর উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকায় ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষ সড়ক অবরোধ করেন। সড়ক ছেড়ে দিতে বললে তারা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা আমাদের একটি গাড়িতে আগুন দেয়। ইটপাটকেলের আঘাতে চার সেনাসদস্য আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে ভারতে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর থেকে প্রতিদিন তাঁকে দেশে ফেরানোর দাবিতে গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বিক্ষোভ করে আসছেন। শনিবারও জেলার কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ করেন নেতাকর্মী। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান নেতাকর্মীকে এ বিষয়ে শপথবাক্য পাঠ করান। উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর হাতে লাঠিসোটাসহ দেশীয় অস্ত্র ছিল। তাদের অনেকে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে হাজির হন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম শাহাবুদ্দিন আজম, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, সহসভাপতি মুজিবুর রহমান হাওলাদার, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফজলুর রহমান দিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

একই দাবিতে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আকরাম হোসেনের সভাপতিত্বে নেতাকর্মী প্রতিবাদ সভা করে। এতে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুর রউফ তালুকদার, আশরাফউদ্দিন তারা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া সারাদেশে আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নেতাকর্মীর বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের প্রতিবাদে শনিবার বরগুনা শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির। বিপরীতে সারাদেশে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও লুটপাটের প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা বিএনপি।