‘পরিস্থিতি অন্য রকম, ঘুষের টাকা একটু বেশি লাগবে’

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪২

ঘুষের টাকাসহ শিক্ষার্থীরা আটক করেন সুনামগঞ্জ জেলা ওষুধ প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. ফাহিম মিয়াকে (কালো শার্ট পরা)।
‘এখন পরিস্থিতি অন্য রকম, তাই ঘুষের টাকা একটু বেশি লাগবে’ সুনামগঞ্জ জেলা ওষুধ তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের ড্রাগ লাইসেন্স নিতে আসা কয়েকজনকে এমন কথা বলেছিলেন কার্যালয়টির অফিস সহকারী মো. ফাহিম মিয়া। সেই অনুযায়ী লাইসেন্সপ্রত্যাশী একজন টাকা নিয়ে আসেন। পরে সেই ঘুষের টাকাসহ ওই অফিস সহকারীকে হাতেনাতে আটক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সুনামগঞ্জ জেলা ওষুধ তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এসময় কার্যালয়টির তত্ত্বাবধায়ক আবু জাফর কার্যালয়ে ছিলেন না। তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়ছরা এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, এলাকায় তার একটি ফার্মেসি রয়েছে। এটির নিবন্ধনের জন্য তিনি ওই কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। এ জন্য আগে ঘুষের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টাকা। সেই অনুযায়ী, তিনি শুরুতে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু নিবন্ধনের কাগজপত্র নেওয়ার জন্য দুই দিন আগে যোগাযোগ করলে অফিস সহকারী মো. ফাহিম মিয়া তাকে জানান, এখন পরিস্থিতি একটু অন্য রকম, বিভিন্ন জায়গায় বেশি টাকা দিতে হয়, তাই ঘুষের টাকার পরিমাণ আরো বাড়বে। তাদের ৩ জনের কাছে আরো ১৫ হাজার টাকা করে দাবি করা হয়। তিনি সবশেষে ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। এতেও কাগজ দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি আজ বৃহস্পতিবার ১০ হাজার টাকা নিয়ে ওই কার্যালয়ে যান। এর আগেই তিনি শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানিয়ে আসেন। তার (আমিনুলের) কাছ থেকে ঘুষের টাকা নেন অফিস সহকারী মো. ফাহিম মিয়া। টাকা নেওয়ার পরই সেখানে উপস্থিত হন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা টাকাসহ হাতেনাতে অফিস সহকারী মো. ফাহিম মিয়াকে আটক করেন।
আটককৃত মো. ফাহিম মিয়া প্রথমে নিজেকে ওই অফিসের কেউ না বলে দাবি করেন। পরে শিক্ষার্থীদের জেরার মুখে নিজের পরিচয় দিতে বাধ্য হন এবং তত্ত্বাবধায়ক আবু জাফর ছুটিতে আছেন বলে জানান। শিক্ষার্থীরা জানান, ড্রাগ লাইসেন্স দেওয়ার জন্য একটি কমিটি আছে। কমিটির সদস্য হিসেবে জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন কার্যালয়ে একজন কর্মকর্তাসহ সদস্যদের ঘুষের টাকা ভাগ দিতে হয়; গত মাসে কাকে কত টাকা দিতে হয়েছে, তার একটা তালিকাও পেয়েছেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠন ওসমান গনী বলেন, ‘আমরা মো. ফাহিম মিয়াকে ঘুষের টাকাসহ আটক করেছি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করেছি। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’
ওষুধ প্রশাসনের সুনামগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু জাফর গণমাধ্যমকে বলেন, তার মা অসুস্থ, তাই তিনি ছুটিতে নিজের জেলা বগুড়ায় আছেন। গত ২ মে তিনি সুনামগঞ্জে যোগদান করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি এই টাকার বিষয়ে কোনো কিছুই জানি না। কোনো দালাল এটা করতে পারে। আমি সুনামগঞ্জ যোগদানের পর কাউকে ড্রাগ লাইসেন্সও দেওয়া হয়নি।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফেদাউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে এক ব্যক্তিকে আটক করেছেন। ঘুষের এই কারবার বন্ধ করতে হবে।