শেবাচিম পরিচালকের গোপন তথ্য ফাঁস করলেন ওয়ার্ড মাস্টার

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১৯:৫৮

শেবাচিম পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম।
নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচিত বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। রাজনৈতিক সুপারিশে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তার বেশ কিছু উদ্যোগ বিতর্কের সৃষ্টি করে। কিন্তু চাকরি হারানোর ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করেননি কেউ।
তবে এবার শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলামের নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করেছেন হাসপাতালের সাবেক ওয়ার্ড মাস্টার রাশেদ। তিনি গত সাড়ে তিন বছর দায়িত্বকালিন সময়ে পরিচালকের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অবৈধ আয়ের উৎস তুলে ধরেছেন একটি ভিডিও বার্তায়।
যদিও সাবেক ওই ওয়ার্ড মাস্টার রাশেদুল ইসলামের এমন অভিযোগ পুরোটাই ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম।
ভিডিওতে ওয়ার্ড মাস্টার রাশেদ দাবি করেন, গত সাড়ে তিন বছর ধরে শেবাচিম হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। তিনি হাসপাতালে তার যতো বৈধ এবং অবৈধ কাজ সব কিছুই ওয়ার্ড মাস্টারদের মাধ্যমে করান।
তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘হাসপাতাল চত্বরে একসময় বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় গাছ ছিল। সেগুলো এখন আর নেই। পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম দায়িত্ব দেয়ার পর গত সাড়ে তিন বছরে ওয়ার্ড মাস্টারদের সহযোগিতায় তার ব্যক্তিগত ক্লিনিকের লোক দিয়ে গাছগুলো কেটে নিয়েছেন। হাসপাতালের সামনে বনায়নের গাছগুলো কিভাবে এবং কতটাকায় বিক্রি করেছেন সেটা পরিচালকই ভালো জানেন। ইতিপূর্বে একটি ফুলের বাগান ছিল তাও শেষ করেছেন পরিচালক।
রাশেদ আরো দাবি করেন, মাস কয়েক আগে পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম তার ক্লিনিকের লোক পাঠিয়ে ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালামের মাধ্যমে হাসপাতালের দুটি গাছ কেটে নেওয়ার চেষ্টা করে। যে বিষয়টি ধরা পড়ে আমার (রাশেদ) কাছে। আমি গাছ দুটি আটকে দেই। পরিচালক ধরা পড়ে গিয়ে গাছ চুরির দায় আমার ওপর চাপানোর চেষ্টা করে। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমাকে শেবাচিম হাসপাতাল থেকেই গত দুই মাস আগে বদলি করিয়েছেন তিনি।
এসময় শেবাচিম হাসপাতালকে পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলামের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা এবং নানা আয়ের উৎস তুলে ধরেন ওয়ার্ড মাস্টার রাশেদ।
তিনি বলেন, হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ বা ব্লাড ব্যাংকের দায়িত্বে ছিলেন আবু জাফর। তাকে এই বিভাগে দায়িত্ব নিতে দেননি পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম। তার পরিবর্তে ওই বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরিচালকের মেয়েকে (তানজিলা)। রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ থেকে বেতনের বাইরে প্রতি মাসে আরো এক লাখ টাকা করে নিচ্ছে পরিচালকের মেয়ে।
তাছাড়া পরিসঞ্চালন বিভাগের সভাপতি পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম ইসলাম নিজেই। এজন্য তিনিও প্রতি মাসে সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। এছাড়া প্যাথলজি বিভাগ থেকে কর্মচারী তরিকুল ইসলাম সোহাগের মাধ্যমে প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন পরিচালক সাইফুল ইসলাম। তিনি কেন এবং কিভাবে এ অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন তা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে দাবি করেন রাশেদ।
তার এমনসব বক্তব্য ভিত্তিহীন এবং মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাশেদ মূলত: বরগুনা হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার। তিনি বরিশালে কাজ করলেও বেতন তুলতেন বরগুনা থেকে। তার প্রেশন বাতিল করতে অনেক দিন ধরেই চাপ ছিল। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে আমরা তাকে রেখে দিয়েছিলাম। তবে তাকে দিয়ে হাসপাতালে কোন কাজই হতো না। বরং লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায়সহ নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
তার ওপর মাস কয়েক আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেবাচিম হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন। হাসপাতাল চত্বরে অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর এজন্য দায়ী ছিলেন ওয়ার্ড মাস্টার রাশেদ। তাকে মরে যাওয়া দুটি গাছ সরাতে বলেছিলাম। সে সেটা না করে আরেকটি গাছ কেটে ফেলেছে। পরদিন ডিজি স্যার পরিদর্শনে এসে মরা গাছ পড়ে থাকতে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসব কারণে রাশেদের প্রেশন বাতিল করেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস।
পরিচালক দাবি করেন, রাশেদ এই হাসপাতালে পুনরায় ফিরে আসতে চাচ্ছে। কারণ এখানে অল্প সময়ে অবৈধ পথে ইনকাম বেশি। রাশেদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা অভিযোগ। ইতিপূর্বে তাকে ঢাকা এবং পিরোজপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে সে টিকতে পারেনি। বরং শেবাচিম হাসপাতালেই সে সর্বোচ্চ সময় দায়িত্ব পালন করেছে।
ব্লাড ব্যাংক থেকে প্রতি মাসে তিনি ও তার মেয়ের মোটা অংকের টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ব্লাড ব্যাংকে ইউজার ফি’শর এসে দায়িত্বরতরা পেয়ে থাকেন। যা সরকারি বিধি মোতাবেক এবং গেজেট ভুক্ত। সে হিসেবেই তার মেয়ে মাসে এক লাখ টাকা পান। আর জাফর নামে যিনি ছিলেন তিনি স্বেচ্ছায় ঢাকা মেডিকেলে বদলি হয়ে গেছেন। তবে পরিচালক হয়ে মেয়েকেই কেন এ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হলো সে বিষয়ে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম।