
যমুনার চরাঞ্চল। ছবি: সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
ভারতের বিহার ও ঝাড়খন্ডে ভারী বৃষ্টি হওয়াতে পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ফারাক্কা ব্যারেজের ১০৯টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে সিরাজগঞ্জের যমুনাপাড়ের সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার কথা ভাবছেন। সেই সঙ্গে বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে গবাদি পশুসহ খাদ্যসামগ্রী উঁচু স্থানে মজুত করার কাজ শুরু করেছে চরাঞ্চলের অনেকেই। যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) সকালে সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের চরাঞ্চল, চৌহালী উপজেলার চরাঞ্চলের আতঙ্কিত কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভারতের ত্রিপুরার ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার পর ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার মানুষের যে ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে, ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ার পর হয়তো সিরাজগঞ্জেও একই অবস্থা হবে। এ কারণে চরাঞ্চলের অনেকেই পশুসহ খাদ্যসামগ্রী বিভিন্ন উঁচু জায়গায় মজুত করছেন।
এদিকে ফারাক্কা ব্যারেজের ১০৯টি গেট খুলে দেওয়ায় এখন পর্যন্ত যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়নি। বরং ২৪ ঘণ্টায় পানি কমেছে। সিরাজগঞ্জে বন্যার বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে যমুনাপাড়ের মানুষদের আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
সিরাজগঞ্জ পাউবো সূত্র জানায়, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত ১ জুলাই থেকে যমুনার পানি বাড়তে থাকে। ৪ জুলাই বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এরপর পুরো দুই সপ্তাহ জেলার ৫টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যা হয়। ১৬ জুলাই বিপৎসীমার নিচে নামে যমুনার পানি। এরপর কয়েক দফায় হ্রাস-বৃদ্ধির পর গত ৯ আগস্ট থেকে আবারো বাড়তে শুরু করে। ১৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে মাত্র এক সেন্টিমিটার কমলেও ১৬ আগস্ট থেকে পুনরায় বাড়তে শুরু করে। ২১ আগস্ট থেকে আবারো যমুনা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ভারত ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ায় পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮০ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানি সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২৩ মিটার। এ পয়েন্টে নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পাউবোর তথ্য মতে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে যমুনা নদীতে পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এসময় জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এবারও ভারী বর্ষণ ও উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে চরের বিস্তীর্ণ মাঠ। চরাঞ্চলে চাষ করা ধান, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেত ডুবে যায়। তবে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেনি।
ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার বিষয়ে ত্রাণ কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, ফারাক্কার পানি পদ্মা নদী হয়ে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে অন্যত্র চলে যাবে। যদিও আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার ও গবাদি পশুর খাবার মজুদ রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার বলেন, ভারত ফারাক্কা বাঁধের গেট খোলার ফলে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা বন্যার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবে যমুনা নদীতে পানি আশার সম্ভাবনা নেই। এতে যমুনাপাড়ের সাধারণ মানুষদের আতঙ্কের কিছু নেই।