শেষদিনে বরিশালে জমা পড়েছে শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:১১

বরিশাল জেলার ম্যাপ। ফাইল ছবি
ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত প্রায় ১৬ বছরে জেলা প্রশাসনের দেয়া আগ্নেয়ান্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সাথে লাইসেন্সধারী অস্ত্রগুলো তিন সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী অস্ত্র জমা দেয়ার শেষ দিন আজ। এরই মধ্যে বরিশাল জেলা ও মহানগরী এলাকার থানাগুলোতে শতাধিক অস্ত্র জমা হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। যার মধ্যে রয়েছে পিস্তল, রিভলবার, শটগান, একনলা ও দোনলা রাইফেল।
তবে এখনো বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র জমা হয়নি। আজ তিন সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা না দেয়া অস্ত্র উদ্ধারে চার সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান করবে যৌথ বাহিনী। এ ক্ষেত্রে আইনী ঝামেলায় জড়াতে পারেন অস্ত্রের লাইসেন্সধারীরা।
বরিশাল জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলা ও মহানগর এলাকায় মোট অস্ত্রের লাইসেন্সধারীর সংখ্যা ৬৬৯ জন। এরমধ্যে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তি পর্যায়ে ১৯৬টি লাইসেন্স দেয় সরকার।
বরিশাল মেট্রোপলিন পুলিশের কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ‘সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের থানায় মোট ৫৯টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা হয়েছে। যার মধ্যে কোতয়ালী থানা এলাকার বাইরে অন্য থানা এলাকার আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদ রয়েছে। বাকিগুলো মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা না হলে পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
অপরদিকে, কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘তাদের থানার অধীনে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। সবগুলো অস্ত্রই জমা হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৮টি কাউনিয়া থানায়, ১টি কোতয়ালী এবং ২টি অস্ত্র ঢাকার একটি থানায় জমা হয়েছে।’
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার মিস্ত্রি জানিয়েছেন, ‘তাদের থানা এলাকায় ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। যার মধ্যে দুটি অস্ত্র জমা হয়েছে তাদের থানায়। বাকি অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের সাথে কথা হয়েছে। তারা বরিশাল এবং ঢাকার বিভিন্ন থানায় অস্ত্রগুলো জমা দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।’
এদিকে, এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানিয়েছেন, ‘তাদের থানার অধীনে মোট ১৪টি অগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। যার মধ্যে চারটি ব্যাংকে নামে লাইসেন্স। ব্যক্তি পর্যায়ে থাকা ১০টি লাইসেন্সধারী অস্ত্র জমা হয়েছে। যার মধ্যে ৮টি এয়ারপোর্ট থানায় এবং দুটি বাইরে রয়েছে।’
বরিশাল মহানগরীর বাইরে জেলা পুলিশের ১০টি থানায় লাইসেন্সধারী আগ্নেয়াস্ত্র জমা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলামের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের ১০টি থানায় রবিবার রাত পর্যন্ত মোট ৩৫টি অস্ত্র জমা হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা দেয়ার আগে থেকেই আরও ১৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র তাদের কাছে জমা রয়েছে। মঙ্গলবার শেষ দিন পর্যন্ত কতগুলো অস্ত্র জমা হলো ওইদিন জানানো হবে বলেন পুলিশ সুপার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘জেলা ও মহানগর এলাকায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তি পর্যায়ে ১৯৬টি লাইসেন্স দিয়েছে তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে বেশিরভাগ লাইসেন্সের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা বা অনুসারীরা।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ করেন। সেই সাথে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগের নেতারাও। এরই মধ্যে বরিশালে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। যাদের অনেকের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তারা আত্মগোপন এবং গ্রেপ্তারের ভয়ে নিজেদের আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিতে পারছে না।
বরিশাল মেট্রোপলিটন এবং জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘স্ব স্ব থানায় অস্ত্র জমা দিতে হবে এমন কোন বাধ্য-বাধ্যবাধকতা নেই। চাইলে দেশের যেকোন থানায় অস্ত্র জমা দিতে পারবে। অস্ত্র জমা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।’