লক্ষ্মীপুরে সাপের কামড়ের শিকার দেড় শতাধিক মানুষ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:০১

লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন অফিস। ছবি: লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরে বন্যার কারণে গেল আটদিনে ডায়রিয়া, আর.টি.আই, সাপে কামড় ও পানিতে ডুবে এক হাজার ৮২ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পানিতে ডুবে দুইজন ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আতঙ্কিত না হয়ে বিশুদ্ধ পানি পান ও সচেতনতার সাথে চলাচল করার পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকরা।
লক্ষ্মীপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দেওয়া তথ্য মতে, লক্ষ্মীপুরে বন্যা শুরু হলে গেল ২২ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) থেকে ২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) পর্যন্ত জেলা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগে ৩২০ জন, সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে ১৩০ জন, রায়পুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৮৬ জন, রামগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৫০ জন, কমলনগর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১৪৮ জন ও রামগতি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১৬৩ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা (আর.টি.আই) নিয়ে জেলায় ৪০ জন, সাপের কামড়ে ১৪৪ জন ও পানিতে ডুবে আক্রান্ত একজন চিকিৎসা নিতে আসেন। জেলা সদর হাসপাতালসহ পাঁচটি উপজেলায় ৬৪টি মেডিকেল টিম, ৫৮টি ইউনিয়নে ১৮০জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ও স্বাস্থ্য সহকারীরা ক্লিনিক ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে উপসহকারী মেডিকেল অফিসারসহ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের স্বাস্থ্য কর্মী ও বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে মেডিকেল ক্যাম্প বসিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের করইতলা কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসেন ৭০ বছর বয়সী হোসেন মিয়া। তিনি জানালেন, বন্যার পানিতে চুলকানি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। এতো পানির মাঝেও ক্লিনিক থেকে ঔষধ পেয়ে তিনি খুব খুশি। এসময় হাঁটু পরিমাণ পানিতে দাঁড়িয়ে ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ও স্বাস্থ্য সহকারীকে সেবা দিতে দেখা যায়।
শুধু করইতলা নয়, বেশ কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে দেখা মিলে এসব স্বাস্থ্য কর্মীদের। বন্যার পানির কারণে স্বাস্থ্য কর্মীরা তাদের নির্ধারিত পোশাক ভিজে গেলেও হাসিমুখে সেবা দিতে দেখা মিলে। কেউ কেউ কলা গাছে ভেলায় চড়ে, কেউ কেউ বুক পরিমাণ পানি ডিঙ্গিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগীদের খবর নিচ্ছেন।
এসময় জানতে চাইলে তোতারখিল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি জাহাঙ্গির আলম জানান, নিজ বাড়িতে পানি ওঠলেও রোগীদের সেবা দেয়াই তার কর্তব্য। স্বাস্থ্যসহকারীসহ তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ঔষধ নিয়ে ক্লিনিক ছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন।
দত্তপাড়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, এবারের বন্যা স্মরণকালের ইতিহাসের বন্যা। তবুও চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি টিকা কার্যক্রমও তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন।
সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর জানালেন, পর্যাপ্ত ঔষধের মজুদ রয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় দেড়গুণ বেশি রোগী এসময় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন বলে জানালেন স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।