-5ead34dc3fbaf.jpg)
ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল।
বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পর বিকল্প হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্যে ময়মনসিংহের ভালুকায় কুমির খামার গড়ে তোলেন মেজবাউল হক ও রাজীব নামের দুই তরুণ।
তাদের মূল লক্ষ্য কুমির চাষের মাধ্যমে বিশ্বে পোশাক শিল্পের মতো বাংলাদেশকে তুলে ধরা।
রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা. আবু সায়েম মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে ১৫ একর জায়গার ওপর বানিজ্যিকভাবে কুমির চাষের লক্ষ্যে ২০০৪ সালে ময়মনসিংহের ভালুকার উথুরায় কাজ শুরু করে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড। ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া থেকে প্রায় সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে আনা হয় ৭৫টি কুমির। যার মধ্যে ছিলো ১৩টি পুরুষ কুমির। কুমির গুলোকে বিশেষ ভাবে তৈরি পুকুরে ছেড়ে দেশীয় আবহাওয়ায় লালন পালনে মানানসই করে তোলা হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে এই ফার্মে কুমিরের সংখ্যা ছোট বড় মিলিয়ে ২ হাজার। প্রথমদিকে আবহাওয়া মানানসই না থাকায় ৫/৭টি কুমির মারা গেছে। এসব কুমিরদের বাঁচিয়ে রাখা, ডিম পাড়ানো, ডিম সংরক্ষণ এবং তা থেকে বাচ্চা ফুটানো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। কিন্তু বিদেশ থেকে আনা কুমির গুলো অল্পদিনের মধ্যে আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে ওঠে। ডিম দেয় এবং তা থেকে বাচ্চা ফুটানো হয়।
ব্যবস্থাপক আরিফ বলেন, কুমিরের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত চড়া মূল্যে বিক্রি হয় আন্তর্জাতিক বাজারে। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে এগুলোর অনেক চাহিদা রয়েছে। ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ২ হাজারটি কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা হয়েছে। প্রতিটি কুমিরের চামড়া ৬/৭’শ ডলার মূল্যে রপ্তানি করা হয়।
আগামী বছর থেকে কুমিরের ১হাজার চামড়াসহ মাংস রপ্তানির টার্গেট নেয়া হয়েছে বলে জানান এই প্রকল্প ব্যবস্থাপক।
তিনি বলেন, ২০১০ সালের ৪ জুন থেকে প্রথম বারের মত এই খামারের উৎপাদিত কুমিরের চামড়া বিদেশে রপ্তানি করা হয়। গেলো ৬ বছরে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শেষে রপ্তানি করা হয়েছে ১ হাজার ৩০টি কুমিরের চামড়া।
সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটিকে আরো সম্প্রসারিত করা যাবে। কুমির চাষ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি অন্যতম উৎস হতে পারে। দূর হতে পারে বেকারত্ব। তাই কুমির চাষে যুব সমাজকে নানা ভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কেউ কুমির চাষে আগ্রহী হলে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগীতা করার কথাও জানান আরিফ।
কুমিরের খাবার প্রসঙ্গে আরিফ বলেন, বাচ্চা ফোটানো থেকে ১বছর পর্যন্ত কুমিরকে প্রতিদিন খাবার দিতে হয় ১ বার করে। বড় কুমিরকে সপ্তাহে ১দিন করে খাবার দিতে হয়। ছোট কুমিরকে গরু ও মুরগির ক্ষীমা এবং মাছের মাথা দেয়া হয়। বড় কুমিরকে ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, ও ছোট মাছ দেয়া হয়।
জলজ প্রাণী চাষ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহাফুজুল হক জানান, কুমির চাষের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নয়ন করা সম্ভব।
ময়মনসিংহ চেম্বার্স অব কমার্সের সহ-সভাপতি ইকরামুল হক বলেন, কুমির চাষে খরচ খুবই কম। ব্রয়লার মুরগির মাংস দিয়ে তাদের খাদ্যে চাহিদা পুরণ করা সম্ভব। এই কুমির চাষকে সম্প্রসারণ করতে হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার কোনো বিকল্প নেই। তাই এই শিল্পের উন্নয়নে সরকারের সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
জেলার প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড.মোহাম্মদ আবতাফ হোসেন বলেন, বেসরকারিভাবে ময়মনসিংহের ভালুকা এবং আকিজ গ্রুপের বান্দরবনের নাইকোনছড়িতে কুমির চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে কুমির চাষ আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় এর চামড়া ও মাংস বিদেশে রপ্তানি করে লাভজনক হওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, এর চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। প্রতি সপ্তাহে কুমিরদের একবার করে খাবার দেয়ায় খরচও কম। কুমিরদের রোগ বালাইও খুব একটা হয়না।