স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে আটক স্বামী

পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:০৬

জিয়া, তার স্ত্রী হাফসা খাতুন ও ছেলে হামিম। ছবি: পাবনা প্রতিনিধি
পাবনার কাশীনাথপুরে গৃহবধূকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে কাশীনাথপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সংলগ্ন জাপান টাওয়ারের তৃতীয় তলায়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নিহত গৃহবধূর নাম হাফসা খাতুন (৩০)। তিনি পাবনার বেড়া উপজেলার কুশিয়ারা-বাগজান গ্রামের মাওলানা নজরুল ইসলামের মেয়ে এবং স্থানীয় স্কাইলার্ক স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। জিয়া (৩৫) আমিনপুর থানাধীন টাংবাড়ি গ্রামের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন খানের ছেলে।
প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, জিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদকব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। এমনকি ইয়াবা ও ফেনসিডিল সেবন করতেন বলেও অভিযোগ আছে।
নিহত হাফসার মা বলেন, ১৫ বছর আগে জিয়া জোরপূর্বক আমার মেয়েকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই জিয়া টাকার জন্য আমার মেয়েকে চাপ দিতেন। পরে আমরা ব্যবসা করার জন্য তাকে কিছু টাকা দেই। কিন্তু জিয়া ব্যবসা না করে টাকাগুলো নষ্ট করেন। কিছুদিন পরে আবার আমার মেয়েকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। মাঝেমধ্যেই মারধর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন। মেয়ের সুখের কথা ভেবে মাঝেমধ্যেই টাকা-পয়সা দিতাম। একপর্যায়ে মোটরসাইকেল কিনে দিতেও বাধ্য হই। কিন্তু তবুও আমার মেয়ে মন পায়নি। জিয়ার বাবা-মাসহ পরিবারের সকলে মিলে আমার মেয়ের উপর নির্যাতন চালাতো। শুধু দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সকল যন্ত্রণা সহ্য করেও হাফসা সংসার করতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা আমার মেয়েকে বাঁচতে দিল না।
হাফসার বাবা বলেন, আমি আমার মেয়ের হত্যাকারী জিয়ার ফাঁসি চাই। সেই সাথে জিয়ার বোনের জামাই মেহেদীসহ পরিবারের ইন্ধনদাতা সকলের বিচার চাই।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার দিন সকাল থেকেই জিয়া হাফসাকে মারধর করতে থাকেন। এক পর্যায়ে প্রতিবেশী এক মহিলা হাফসার শিশুকন্যা জ্যোতিকে নিজের কাছে নিয়ে রাখেন। বিকেলের দিকে বাসায় ভাংচুর ও উচ্চস্বরে চেচামেচি ও কান্নাকাটির শব্দ হলে পার্শ্ববর্তী নবীর সরদারসহ কয়েকজন বাসায় যেতে গেলে বিল্ডিং মালিক তাদের বাঁধা দিয়ে জানান, এটা ওদের পারিবারিক বিষয়। মাঝেমধ্যেই ওদের মধ্যে ঝামেলা হয়। আমাদের বহিরাগতদের যাওয়া উচিত হবে না।
প্রতিবেশীরা জানান, সন্ধ্যার পর জিয়া স্থানীয় দুই/একজনকে ফোন করে তার স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি জানালে স্থানীয়রা এসে টয়লেটের মধ্যে হাফসার গলায় ওড়না পেচানো লাশ পান। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জিয়াকে আটক করে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাফসার ছেলে হামিম ঘটনার সময় অজ্ঞান হয়ে যায় এবং তাকে মা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামিম জানান, তার ফুপা মেহেদী হত্যার কাজে তার বাবার একমাত্র ইন্ধনদাতা।
হাফসার মামা কিরণ জানান, আমার ভাগ্নির সাথে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনা স্পষ্ট প্রমাণ করে জিয়া অসহনীয় অত্যাচার করে ওকে মেরে ফেলেছে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ায় খুনী জিয়া গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বাথরুমে ফেলে রাখেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী এক মহিলা বলেন, এর আগেও প্রায় দিনই মারপিট করতেন জিয়া। দুই সন্তানের মায়ায় শত গঞ্জনা সহ্য করে যাচ্ছিলেন হাফসা। তবু শেষ রক্ষা হলো না। প্রতিবেশী কেউ এগিয়ে গেলে তাকে গালিগালাজ করতেন জিয়া।
এবিষয়ে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, খবর পাওয়া মাত্র পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই হাফসার মৃত্যু হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে জিয়াকে আটক করা হয়েছে।