টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কক্সবাজার, পাহাড় ধসে ৭ জনের মৃত্যু

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:২৬

গত বুধবার থেকে কক্সবাজারে মাঝারি থেকে কখনো কখনো ভারী বর্ষণ হচ্ছে। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি
টানা ২৪ ঘন্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কক্সবাজার শহরসহ আশপাশের উপজেলা গুলো। এছাড়া পৃথক পাহাড় ধসে কক্সবাজারে সদর ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজন, শহরের হালিমারঘোনায় ১ জন ও উখিয়ার ক্যাম্প ১৪ নম্বরের হাকিমপাড়া পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়।
আজ শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৩ টার দিকে ঝিলংজা ইউনিয়নের ২ ওয়ার্ডের দক্ষিণ ডিককুল, শহরের হালিমারঘোনা এবং উখিয়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসের এঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, দক্ষিণ ডিককুলের মিজানুর রহমানের স্ত্রী আখি মনি এবং তার দুই শিশু কন্যা মিহা জান্নাত নাঈমা ও লতিফা ইসলাম, হালিমারঘোনার জাহেদ (৭)। ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই ২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম আব্দুল হাফেজ এবং আবদুল ওয়াহেদ।
ডিককুলে পাহাড় ধ্বসে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুল করিম সিকদার জানান, রাত ২টার দিকে ভারী বৃষ্টি হওয়ার সময় মিজানের বাড়ির দিক থেকে একটি পাহাড় ধসের বিকট শব্দ শুনতে পায় তারা। পরে তারা গিয়ে দেখেন স্ব পরিবারে মাটিচাপা পড়েছে মিজানের পরিবার। তাৎক্ষণিকভাবে মিজানকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে আজ ভোর রাতের দিকে কক্সবাজার দমকল বাহিনীর সহযোগিতায় উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে স্ত্রী ও দুই শিশু মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, মিজানের বাড়িটি পাহাড়ের পাদদেশে। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে যায়। পরে মধ্যরাতে উপর থেকে পাহাড় ধসে তার বাড়িতে পড়ে। স্বেচ্ছাসেবকেরা বিধ্বস্ত ঘর বাড়িতে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার দোলন আচার্য প্রতিবেদককে বলেন, সদরের তিনজনের মরদেহ বের করে আনা হয়েছে।
কক্সবাজার ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার সামশুদ্দৌজা নয়ন জানান, ভারী বর্ষণে উখিয়া ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে গত বুধবার থেকে কক্সবাজারে মাঝারি থেকে কখনো কখনো ভারী বর্ষণ হচ্ছে। ভারী বর্ষণে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার জেলা শহর সহ বেশ কিছু গ্রামে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে অনেকের বাড়ি ঘর প্লাবিত হয়েছে। এতে এলাকায় জনজীবনে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষ করে কক্সবাজার শহরের কলাতলী, নুনিয়ারছড়া, সমিতিপাড়া, বাহারছড়া, সুগন্ধা পয়েন্ট, বাসটার্মিনাল, ডিককুল, আলীর জাঁহাল, পেশকারপাড়া, সদরের লিংকরোড, বাংলাবাজার, খরুলিয়া, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিতে এসব এলাকায় সাধারন মানুষ খাবারে কষ্টে রয়েছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টা থেকে আজ শুক্রবার দুপুর ৩ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০১ মিলিমিটার। চলমান মৌসুমে এটি একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। আরো একদিন ভারি বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার লাবণী এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে ২৩ জেলে নিয়ে ‘এফবি রশিদা’ নামে একটি ফিশিং ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে । এ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার মোহাম্মদ জামাল (৩৭) নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। ট্রলারটির আরো চার মাঝিমাল্লা নিখোঁজ রয়েছেন।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সমুদ্র সৈকতের লাবণী এলাকায় ঝড়ো বাতাসের কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। নিহত জামালের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা এলাকায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (পর্যটন সেল) তানভির হোসেন।
ডুবে যাওয়া ‘এফবি রশিদা’র জেলে মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাগরের লাবণী এলাকায় আসার পর ঝড়ো বাতাসের কবলে পড়ি আমরা। তখন ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এসময় ট্রলারটি ডুবে যায়। আমাদের চার জেলে ঢেউয়ের স্রোতে ভেসে গেছেন। আরেক জেলে জামালের অবস্থা খারাপ ছিল। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, ট্রলারটিতে ২৩ জন মাঝিমাল্লা ছিল। একজন মারা গেছেন। চারজন নিখোঁজ রয়েছেন।
পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. তানভির হোসেন বলেন, সমুদ্র সৈকতে কর্মরত লাইফগার্ড কর্মীরা ভাসমান অবস্থায় জেলেদের উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসেন। গুরুতর আহত অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে । এঘটনায় আরও কয়েকজন নিখোঁজ আছেন বলে শুনেছি। তাদের উদ্ধারের জন্যে কাজ চলছে।