পাওনা পরিশোধের জন্য ডেকে ব্যবসায়ীদের মারধর

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৪৬
-66e6bb063d7a4.jpg)
পাওনাদারদের মারপিটের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন। ছবি: নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে কারখানায় ডেকে নিয়ে ১০ ব্যবসায়ীকে মারধর ও ১১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওসমান অ্যাগ্রো ইন্ড্রাস্ট্রি (প্রা.) লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের মালিক ওসমান গণি ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কয়েকজন ব্যবসায়ী।
আজ রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নওগাঁ শহরের একটি রেস্টুরেন্টের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে মারধরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় চালকল মালিক ওসমান গণি ও তার ছেলে রুহুল আমিন, ব্যবস্থাপক আবু নাছিম মো. মশিউর রহমানসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ১২০ জনের বিরুদ্ধে মহাদেবপুর থানায় মামলা করেছেন মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স নামের ধান আড়তের স্বত্বাধিকারী ছামিউল আলম।
অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার আমাদের চালকল কারখানায় পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য কয়েকজন ধান আড়তদার ও চালকল মালিক এসেছিলেন। সেদিন তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে পাওনাদাররা আমাদের কারখানায় ভাঙচুর চালান ও কর্মচারীদের মারধর করেন। আমাদের লোকজন কারও গায়ে হাত দেননি। এখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো ও সংবাদ সম্মেলন করে মর্যাদাহানির চেষ্টা করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছামিউল আলম। লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, ওসমান গণি দুই শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কাছ থেকে বাকিতে ধান কিনে পাওনা টাকা না দিয়ে পালিয়ে যান। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা তার কাছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা পান। পাওনা টাকা উদ্ধার ও অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর শাস্তির দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ওসমান গণি টাকা না দেওয়ার জন্য প্রতারণামূলক বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন শেষে গত বৃহস্পতিবার কয়েকজন পাওনাদারকে টাকা নেওয়ার জন্য তার মিলে ডেকে নেন। এদিন দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে পাওনাদাররা ওসমান অ্যাগ্রো অটোমেটিক রাইস মিল কারখানায় গেলে আগে থেকে ওৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ধান-চাল ব্যবসায়ী আতাউর রহমান, আনোয়ার হাসেন, আব্দুস সাত্তার, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, মামুনুজ্জামান জিন্নাহ, তৌহিদুল ইসলাম, ইমরান হোসাইন রাজু, নূরনবী, মোনায়েম হোসেন ও ছামিউল আলম আহত হন। এ ছাড়া পাওনা টাকা নিতে আসা ওই সব ব্যবসায়ীদের ১১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
ছামিউল আলম বলেন, সেদিন আমরা ২০-২৫ ব্যবসায়ী পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য ওসমান গণির চালকল কারখানায় গিয়েছিলাম। কৌশলে ডেকে নিয়ে আমাদের ১০ জনের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা ১০০ জনের বেশি ছিল। আমরা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অতর্কিত হামলা করা হয়। হামলায় আহতদের মধ্যে অধিকাংশই নওগাঁ সদর হাসপাতাল ও মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহতদের মধ্যে আতাউর রহমান, আনোয়ার হোসেন ও আব্দুস সাত্তার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন।
তিনি আরও বলেন, হামলার ঘটনার পর চার দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ মূল আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এদিকে ওসমান গণি আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। ওসমান গণি ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ওসমান গণি ও তার ছেলে রুহুল আমিনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, গত বৃহস্পতিবার ওসমান অ্যাগ্রো অটোমেটিক রাইস মিল কারখানায় মারামারির ঘটনায় উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা করেছেন। পাওনাদারদের করা মামলায় হাফিজুর রহমান নামে রাইস মিলের এক কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অভিযুক্ত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে মেসার্স বেলাল ট্রেডার্স ধান আড়তের মালিক আহসান হাবিব, মেসার্স রিফাত ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আবু হেনা মোস্তফা, মেসার্স মাহবুব রাইস মিলের মালিক মোনায়েম হোসেন, মেসার্স আল-আমিন ট্রের্ডাসের স্বত্ত্বাধিকারী তৌহিদুল ইসলাম, মেসার্স জেমি ট্রেডার্সের স্বাত্ত্বাধিকারী মামুনুজ্জামান জিন্নাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।