Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

বন্যাদুর্গত কৃষকদের জন্য ধানের চারা তৈরি

Icon

আমীন আল রশীদ

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:০৬

বন্যাদুর্গত কৃষকদের জন্য ধানের চারা তৈরি

কৃষকদের মাঝে বিতরণের জন্য তারা ৩০ লাখ ধানের চারা তৈরি।

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর প্রধান চ্যালেঞ্জ দুর্গত এলাকার মানুষের ঘুরে দাঁড়ানো। বিশেষ করে ফসলের মাঠ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়। কৃষককে নতুন করে ফসল বুনতে হয়। কিন্তু অনেক সময় বীজের সংকট দেখা দেয়। এ রকম বাস্তবতায় ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

কৃষকদের মাঝে বিতরণের জন্য তারা ৩০ লাখ ধানের চারা তৈরি করছেন। বন্যার পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর কৃষকদের কাছে এই বীজগুলো পৌঁছে দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লাসহ ১৬টি জেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর ফসলি জমিতে রোপণ করা আমন ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে প্রান্তিক কৃষকরা দিশেহারা। তা ছাড়া এত বিপুল পরিমাণ ধান নষ্ট হওয়ায় আগামী মৌসুমে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের অনেকের পক্ষেই আবার বীজ তৈরি করে কিংবা কিনে নতুন করে ধান উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় দুর্গত এলাকার কৃষকদের জন্য মাঠে নেমেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কৃষিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বিনা ধান-১৭ ও বিনা ধান-২০-এর চারা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। দ্রুত ৩০ লাখ ধানের চারা সফলভাবে তৈরি করা সম্ভব হবে বলে তারা আশাবাদী। 

ড্যাফোডিলের শিক্ষক কৃষিবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম বলছেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কেননা তারাই বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। কৃষিনির্ভর দেশের কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি সামগ্রিকভাবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায়ও হুমকি তৈরি করবে। ফলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় প্রায় ৩০ লাখ ধানের চারা বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছি, যা প্রায় ১০০ একর জমিতে রোপণ করা সম্ভব হবে।’ 

অধ্যাপক রহিম জানান, বিনা-১৭ এবং বিনা-২০ জাতের ধানের চারা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ এই ধানের স্থায়িত্ব বেশি এবং স্থানীয় আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ধানের চারা ছাড়াও বন্যাদুর্গত এলাকার 

কৃষকদের জন্য শীতকালীন সবজির চারাও দেওয়া হবে, যাতে তারা বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেন। সেই সঙ্গে আগামী মৌসুমে সবজির কোনো ঘাটতি না হয়। 

এদিকে বন্যা-পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনে সহায়তার জন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠেও ধানের চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বীজতলায় আমন ধানের বিভিন্ন জাতের চারা যেমন-ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-২৩, বিনা ধান-১৭ বপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সবজির চারাও উৎপাদন করা হচ্ছে। 

এবারের বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জমির শাকসবজি, ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গবাদিপশুর বাসস্থান। গোয়ালঘরসহ বসতভিটায় পানি ওঠায় গো-খাদ্যের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। পশুর অসুখ-বিসুখ বেড়ে গেছে। অনেকের পুকুরের ভেসে গেছে। সাম্প্রতিক বন্যায় অনেকেই তাদের গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। অনেকে তাদের পশু বাঁচাতে পারেননি। বানের জলে ভেসে গেছে। এর মধ্যে প্রান্তিক কৃষক ও খামারিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। 

এ রকম বাস্তবতায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বন্যা-পরবর্তী করণীয় বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় ১২টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা ছাড়া বন্যা-পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনে সুইজারল্যান্ডেরও সহযোগিতা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় উপদেষ্টা বলেন, বন্যা-পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনই এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার ও চ্যালেঞ্জ। সরকার বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কৃষকদের সক্ষমতা ও সামর্থ্য বাড়াতে কৃষি ক্ষেত্রে বীমা চালুর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের কৃষকরা এখনো কৃষি বীমার ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহী নন। ভবিষ্যতে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫