আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান। ছবি: সংগৃহীত
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালির সংঘর্ষের জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে নাশকতা রোধে খাগড়াছড়ি পৌর শহর ও জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের সহিংসতা রোধে প্রশাসন এই ব্যবস্থা নিয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় সদরসহ পুরো জেলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে রাতের গোলাগুলি ও বিকেলের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।
নিহতরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)।
বৃহস্পতিবার রাতে (আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টা) জেলা শহরের নারানখখাইয়া, স্বনির্ভর এলাকায় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত পাওয়া যায় গুলির শব্দ ।
এর মধ্যে ধনঞ্জয় চাকমা দীঘিনালায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংঘর্ষে মারা যান। অপর দুজনকে আহত অবস্থায় রাতে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, আহতদের মধ্যে তিনজন মারা যান। নিহত ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্ত শেষে বলা যাবে।
রিপল বাপ্পী চাকমা আরো জানান, রাতেই চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একজন বাঙালি রয়েছেন। আহত বাকি ৯ পাহাড়িকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব বলে তিনি জানান।
তিনজনের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার সকালে দীঘিনালা লারমা স্কয়ারে যান জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও দীঘিনালা জোন অধিনায়ক। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট পরিদর্শন করেন তারা। পরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য পাহাড়ি-বাঙালি উভয়কে ঐক্যবদ্ধ থাকার অনুরোধ করছি। গতকালের আগুনে পুড়ে যায় অন্তত ১০২টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেওয়া হবে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
দীঘিনালা জোন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওমর ফারুক বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। কালকে রাত থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত আছে। বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।