Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

‘ওযু করে ডাব ডোবাতেই ভেসে উঠল শিশুর মরদেহ’

Icon

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:১২

 ‘ওযু করে ডাব ডোবাতেই ভেসে উঠল শিশুর মরদেহ’

কুমারখালী থানা। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নিখোঁজের প্রায় ১৯ ঘণ্টা পরে সিদ্রাতুল মুনতাহা নামের আড়াই বছরের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। 

আজ বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর সরদারপাড়ার হাকিম সরদারের পুকুর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। মুনতাহা ওই এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের মেয়ে।

পরে খবর পেয়ে দুপুর ২টার দিকে কুমারখালী থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহটির সুরতহাল করে। তবে ময়নাতদন্তের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে শিশুটির স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, ওই পুকুরের পাশে তালগাছ আছে। সেখানে জলপরী ও জ্বিন বাস করে। মেয়েটিকে তারাই তুলে নিয়ে মেরে ফেলেছে। 

তবে পুলিশ ও চিকিৎসক বলছেন, স্বজনদের দাবি অযৌক্তিক ও বিজ্ঞান সম্মত নয়।

শিশুটির চাচা মিরাজুল ইসলামের ভাষ্য, গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আশপাশের পুকুর, প্রতিবেশী ও স্বজনদের বাড়িসহ সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই থানায় জিডি করা হয়। এরপর আজ বুধবার সকালে এক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলেন শিশুটির বাবা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কবিরাজের দেখানো পুকুর থেকে শিশুটির ভাসমান মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

মরদেহ উদ্ধারের প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবেশী চাচা আতিয়ার রহমান ( ৪১) বলেন, ‘ওই জায়গায় রাতেও অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল। পাওয়া যায়নি। তবে দুপুরে শিশুর বাবা প্রথমে বুক সমান পানিতে নেমে ওযু করেন। তারপর পানিতে দুধ ঢালেন, লবণ দেন। একটা ডাব ডুবিয়ে দেন। এরপর ডাবও ভাসে উঠল, লাশও ভাসল।’

এলাকাবাসী জানান, শিশুটির বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে ‘৫৫৫’ নামক একটি ইটভাটা আছে। ভাটায় শিশুর বাবা ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। প্রায় শিশুটি একা একা হেঁটে বাবার কার্যালয়ে যেত। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাবার কাছে যাওয়ার সময় শিশুটি নিখোঁজ হয়েছিল। আশপাশের পুকুর, প্রতিবেশী ও স্বজনদের বাড়িসহ সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই থানায় জিডি করা হয়। এরপর আজ বুধবার সকালে এক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলেন শিশুটির বাবা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কবিরাজের দেখানো পুকুর থেকে শিশুটির ভাসমান মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

সকালে ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিশুটির বাড়ির সামনে কাঁচা সড়ক। সড়ক ঘেঁষে বড় পুকুর রয়েছে। পুকুরে জাল টেনে খোঁজা হচ্ছে শিশুটিকে। সড়ক ও পুকুরপাড়ে উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভিড়। এরপর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে স্বজনরা শিশুটির মরদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তখন স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে আকাশ-বাতাস।

এ সময় কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে শিশুটির মা পিংকি খাতুন বলেন, ‘প্রায় মেয়ে একা একা ওর বাবার অফিসে যেত। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আর ফিরে আসেনি। আমার কোনো শত্রু নেই। কেউ ওকে মারিনি। আল্লাহর মাল আল্লাহ নিছে। কোনো অভিযোগও নেই।’

বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। পরে কবিরাজের দেখানো পুকুর থেকে এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী লাশ পেয়েছি। ওই পুকুরে জলপরী আছে। হয়তো আমি জলপরীর কোনো ক্ষতি করেছি। সেজন্য আমার মেয়েকে জলপরীই মেরেছে। আমার কোনো অভিযোগ নেই।’

‘৫৫৫’ ভাটার নৈশ্যপ্রহরী আবু বক্কর (৬১) বলেন, ‘অনেক বার রাতে পুকুর ও তালগাছে জলপরী ও জ্বিন দেখেছি। কখনও গলাকাটা, কখনও সাদা কাপড় পরা। ঝড়ের রাত না হলেও আবার কখনও দেখতাম তালগাছটি পড়ে যাচ্ছে মাটিতে।’

গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ হাকিম সরদার বলেন, ‘পাশেই কালি মন্দির আছে। বাপ দাদার মুখে শুনতাম, তালগাছের ওখানে প্রায় গরু-মহিষ মরে থাকত। প্রায় ৩৫ বছর আগে এলাকার নিজাম নামে একজন মারা গিয়েছিল। এই পুকুরে এ নিয়ে তিনজন মারা গেল।’

কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মু. আহসানুল মিজান রুমী বলেন, স্বজনদের দাবি অযৌক্তিক ও বিজ্ঞান সম্মত নয়। ময়নাতদন্ত করলে সঠিক কারণ জানা যাবে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার বিকেল থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল। আর বুধবার দুপুরে পুকুর থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করে সুরহাল করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত হবে কি না সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

তার ভাষ্য, স্বজনদের দাবি জলপরী বা জ্বিনের কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে তাদের দাবি আইন ও বিজ্ঞান বহির্ভূত বলে তিনি জানান।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫