বেনাপোল সীমান্তে মাদক চোরাচালানের ‘গডফাদার’ ১৫ মামলার আসামি আলোচিত বাদশা মল্লিককে (৫৭) অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যরা।

গতকাল বুধবার (৩ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে বেনাপোলের রঘুনাথপুর সীমান্তের কোদলারহাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বাদশা মল্লিক বেনাপোল পোর্ট থানার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত কেরামত মল্লিকের ছেলে। তিনি বর্তমানে বেনাপোলের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা। 

যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় কুখ্যাত মাদক সম্রাট বাদশা মল্লিক রঘুনাথপুর সীমান্তের কোদলারহাট এলাকায় অবস্থায় করছেন। এমন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবির একটি অভিযানিক দল সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

বাদশা দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় অস্ত্র ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাকারবারি, মাদক, হুন্ডিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তার বিরুদ্ধে ১৫টির অধিক মামলা রয়েছে।

তিনি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, কিছুদিন আগে বিজিবি ১টি শ্যুটার গান, ৫ রাউন্ড গুলি ও ২৫৩ বোতল ফেনসিডিলসহ বাদশাকে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠায়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি আবারও সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানি কার্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।

বাদশার সঙ্গে ভারতের ডনখ্যাত গৌতম, রবিউল, আজার, নাসির, অপু সাহার সঙ্গে রয়েছে তার নিবিড় যোগাযোগ। 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবি জানায়, বাদশা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বর্তমানে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অঞ্চলের শীর্ষ রাজনীতিক, দেশদ্রোহী, অর্থ-পাচারকারীসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি বা সন্ত্রাসীদের টাকার বিনিময়ে ভারতে পালানোর সুযোগ করে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এছাড়াও তিনি শার্শা উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বাংলাদেশ এবং ভারতের নাগরিক হওয়ায় বাংলাদেশ প্রশাসনের চাপে পড়লে ভারতে পালিয়ে যান, আবার ভারতের চাপে পড়লে বাংলাদেশে চলে আসেন। তাকে গ্রেপ্তার করার পর জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মাদক, চোরাচালান ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের এবং বাদশার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে বিজিবি।

এদিকে বাদশা মল্লিককে আটকের খবরে বেনাপোল এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য। মাদক সম্রাট বাদশার বিরুদ্ধে সোনা-অস্ত্র-ফেন্সি-গাঁজা-হুন্ডি পাচার ও মাদকের ব্যবসা করে বাদশা হয়ে যান আন্তঃদেশীয় মাদকপাচারকারীদের গডফাদার। যার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে অস্ত্র ও মাদকসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনের অসংখ্য মামলা। তারপরও থেমে নেই বেপরোয়া বাদশা। সম্প্রতি বাদশার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের সীমান্ত পার করে ভারতে পাঠিয়ে মোটা অংকের অর্থ লুটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য সম্প্রতি সীমান্ত এলাকার কুখ্যাত বাদশার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য যশোর ৪৯ বিজিবি সদস্যরা সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালায়।