Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

ময়মনসিংহের সীমান্তে ৫০ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ

Icon

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৪২

ময়মনসিংহের সীমান্তে ৫০ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ

ময়মনসিংহের সীমান্তে ৫০ গ্রাম প্লাবিত। ছবি: প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ১৭ ইউনিয়নের ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে নিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। 

ওই দুই উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন বিভাগের স্থাপিত কন্ট্রোল রুম।

আজ শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এখন নারী শিশুসহ ৭ শতাধিক মানুষ আছে। তাদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট সীমান্তবর্তী চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে দর্শা, মেনংছড়া, বোরারঘাট ও শেওয়াল নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। পরে রাতেই বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের মহিষলেটি, ধোপাজুড়া, কড়ইতলী, জুগলী ইউনিয়নের গামারীতলা, জিগাতলা, নয়াপাড়া, ছাতুগাও, কৈচাপুর ইউনিয়নের নলুয়া, জয়রামকুড়া এলাকাসহ গাজীরভিটা ইউনিয়নের বোরাঘাট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সূর্যপুর, সামিয়ানাপাড়া হাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়।

স্থানীয়রা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের দর্শা, সেওলা ও মেনংছড়া এবং গাজিরভিটা ইউনিয়নের বোরারঘাট নদীর তীরবর্তী বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কয়েক হাজার বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভোগাই নদীর বিভিন্ন অংশে বাঁধ উপচে ও পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে হালুয়াঘাট পৌরশহর, সদর ইউনিয়নসহ হালুয়াঘাট বাজারের বিভিন্ন অংশ পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। 

হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জানান, তার এলাকার মহাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারা এলাকায় পানি বেশি। তবে সকালে পাহাড়ি ঢলে সীমান্তে সড়কের উপড়ে তিন ফুট পানি ছিল। এলাকার পুকুরের মাছ সব চলে গেছে, শনিবার সকাল ১১টার দিকে পানি কমা শুরু করলে আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

একই উপজেলার ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া জানান, গতকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। গতকাল দুপুরের দিকে শেওয়াল ও মেনেং নদীর দুইটি অংশে পাড় ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। ঘরের ভেতরে পানি না ঢুকলেও বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

এদিকে, জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে ১৫ হাজার ৪৩৮ হেক্টর। এর মধ্যে পুরোপুরি ডুবে গেছে ৯ হাজার ৭৮ হেক্টর জমি, আংশিক ডুবেছে ৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর এবং আংশিক প্লাবিত হয়েছে ১৫৮ হেক্টর। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। বৃষ্টি বাড়লে পানি আরও বাড়তে পারে। উপজেলায় মোট ৭টি ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দুটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। আনুমানিক ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে।

৭ ইউনিয়নে ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইটা আনুমানিক বলছি। কারণ, অনেক এলাকায় এখনো কোন খোঁজখবর নিতে পারিনি। ওইসব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নৌকার অভাবে সব এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি। তাছাড়া, ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, সঠিক তথ্য এখনো আমরা পাইনি। সঠিক তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে। বন্যা দুর্গতদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া আছে।

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবিদুর রহমান বলেন, পানি কিছুটা কমে গিয়েছিল। পরে আজ আবারও প্রায় টানা দুই ঘণ্টা বৃষ্টি হওয়ায় পানি আবার বেড়ে গেছে। উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নারী-শিশুসহ প্রায় ৭ শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া শতাধিক গরু ছাগলও আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য ১০ হাজার ম্যাট্রিকটন খাদ্য সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে। খাদ্য বিতরণ চলমান আছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, মৎস্য চাষিদের কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার সঠিক কোন তথ্য এখনো আমাদের জানা নেই। উপজেলা মৎস্য অফিসারদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫