এক পায়ের ‘আঙুল’ দিয়ে লিখে আলিম পাস করলেন রাসেল

নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৪৬

প্রতিবন্ধী রাসেল মৃধা। ছবি: নাটোর প্রতিনিধি
জন্ম থেকেই দুই হাত নেই, ডান পাও নেই। বাঁ পা থাকলেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা খাটো। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখেন পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করবেন। এরপর বা-মাসহ পরিবারের দায়িত্ব নিজে নেবেন। তাই কোনো বাধাই তাকে পেছনে ফেলতে পারেনি। পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম রেখে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছেন প্রতিবন্ধী রাসেল মৃধা।
তিনি সিংড়া শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩.২৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এর আগে, নাটোর জেলা সিংড়া আল মাদ্রাসাতুল জামহুরিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
রাসেল নাটোরের সিংড়া উপজেলার শোলাকুড়া এলাকার দিনমজুর আব্দুর রহিম মৃধার ছেলে। ছেলের পাস করার খবর পেয়ে বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সবাই আনন্দিত।
আব্দুর রহিম মৃধা বলেন, আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হয়েও দুই পরীক্ষায় পাস করেছে। সে জন্য আমার পরিবার অনেক আনন্দিত। অভাব-অনটনের মধ্যেও আমার ছেলের পড়ালেখা বন্ধ করিনি। আমার প্রতিবন্ধী ছেলে তার মনোবল ও ইচ্ছা শক্তিতে আজ সে আলিম পাস করেছে। আমার ছেলের এ সফলতার পিছনে শিক্ষকদের অনেক শ্রম রয়েছে। শিক্ষকদের প্রতি চির কর্তৃজ্ঞ। আমার ইচ্ছা এভাবে এমএ পাস করে উচ্চ শিক্ষা শেষে তার যোগ্যতায় সে চাকরি করবে। এ জন্য আমার যত কষ্টই হোক আমি ছেলের জন্য তা করব।
রাসেল মৃধা বলেন, অনেক ভালো লাগছে আমি আলিম পরীক্ষায় পাস করেছি। আমার বাবা দিনমজুরের কাজ করে আমার মতো একজন প্রতিবন্ধী ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছেন। আমি আমার বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমার মতো একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে যেন একটা সরকারি চাকরি দেন। আমি চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করতে চাই। আমার পরিবারের দায়িত্ব নিতে চাই।
শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোতাররফ হোসেন বলেন, রাসেল মৃধার দুই হাত নেই, একটি পা আছে সেটাও স্বাভাবিক নয়। আঙুল দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেয়। রাসেল নানা প্রতিকুলতার মাঝেও পড়াশোনা করে যাচ্ছে। সে দারিদ্র পরিবারের সন্তান। আমরা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩.২৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সে ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ৩.৮৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। তার ইচ্ছা শক্তির কারণে আজ সে এত দূরে এসেছে। তার জন্য দোয়া করি, সে পড়াশোনা শেষ করে জীবনে উন্নতি করুক। তার সাফল্য কামনা করছি।