Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

‘ভাত চাই না, চাই শক্ত বেড়িবাঁধ’

Icon

পিরোজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৭

‘ভাত চাই না, চাই শক্ত বেড়িবাঁধ’

নদী তীরবর্তী অধিকাংশ এলাকায় বেড়ি বাঁধ না থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে ইন্দুরকানী উপজেলার বাসিন্দারা। ছবি: পিরোজপুর প্রতিনিধি

‘মোরা ভাত চাই না চাই শক্ত বেড়িবাঁধ। জোয়ার অইলেই উডান বাড়ি সব তলাইয়া যায়। ভয়তে থাহি আবার কোন সময় সিডরের নাহান পানিতে সব ভাসাইয়া লইয়া যায়।’- কথা গুলো বলতে বলতে কান্না করছিলেন আব্দুর রব নামে এক বৃদ্ধ। পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়ার বলেশ্বর নদের পাড়ের চণ্ডিপুর গ্রামে তিনি বসবাস করেন। 

ইন্দুরকানী উপজেলাটি তিন দিক থেকে নদীবেষ্টিত। তাই নদী তীরবর্তী বাসিন্দার সংখ্যাও এখানে অনেক বেশি। কিন্তু নদী তীরবর্তী অধিকাংশ এলাকায় বেড়ি বাঁধ না থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে ওই সব এলাকার বাসিন্দারা। ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে এই উপজেলাটি বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয়েছিল ২০০৭ সালে। তখন উপজেলায় প্রাণহানি ঘটে ৭২ জনের। বিধস্ত হয় নদী তীরের সকল বেড়িবাঁধ। তারপর থেকে নামে মাত্র সংস্কার হয়েছে বেড়িবাঁধের। তা সমস্যার সমাধান করতে পারে নাই। 

সামান্য জোয়ারে লোকালয় পানিতে প্লাবিত হয়। ডুবে যায় ফসলের ক্ষেত। আবার লবণাক্ত পানিও জোয়ারের সাথে প্রবেশ করে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে। জোয়ারের পানির সাথে ভেসে আসা কচুরিপানা জমে যায় ফসলের ক্ষেতে। ডুবে যায় যাতায়াতের পথ। পানির চাপে ভেঙ্গে যায় বসতঘরের মাটির তৈরী মেঝে। ভেসে যায় মাছের ঘের। স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থীদের বন্ধ হয়ে যায় স্কুলে যাতায়াত। সব মিলিয়ে বেড়িবাঁধ সংকটে দিশেহারা স্থানীয়রা।

উপজেলার কচা নদীর তীরবর্তী টগড়া গ্রামের বাসিন্দা জেলে জিয়াউল আহসান জানান, ‘বন্যার পানিতে বান ভাইঙা পানি ডুইক্যা ঘরডা শেষ হয়ে গেছে। এহন কই থাকমু।’ অপর দিকে পত্তাশী ইউনিয়নের চাড়াখালী গুচ্ছগ্রামের কহিনুর বেগম জানান, ‘গাঙ্গের ঢেউর পানি সব ঘরে ওডে। চাইরো কুল সব তলাইয়া যায়। ঘর দিয়া বাইরকুলেও নামা যায় না। পোলা মাইয়া লইয়া খাডের (খাটের) উপরে বইয়া থাহা লাগে। রাইন্দা খাওয়ারও উপায় থাহে না। চুলায়ও পানি ওডে। দুহারের (দুপুরের) খাওন খাওয়া লাগে রাইতে। সরকারের কাছে ত্রাণ সহায়তা নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ‘ইন্দুরকানী উপজেলার নদী তীরের অধিকাংশ স্থানে কোন বেড়িবাঁধ নেই। ফলে জনগনের খুব সমস্যা হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মান প্রয়োজন।’

ইন্দুরকানী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুন নেছা সুমি জানান, ‘কচা ও বলেশ্বর বেড়ি বাঁধের অভাবে ইন্দুরকানীতে আমন মৌসুমে অতিরিক্ত পানিতে ৫০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে স্লুইসগেটগুলো বাধঁ ভেঙে নদের লবণ পানি ঢুকে বোরো মৌসুমের ফসল ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই এই এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।’

পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে কচা ও বলেশ্বর নদীর নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধসহ পুরোনো বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। দ্রুত বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫