৫ লাখ গ্রাহককে ৪ ঘণ্টা ভোগান্তিতে রেখে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মচারীদের প্রতিবাদ

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৬

বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি—১। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি—১ এর জেনারেল ম্যানেজারকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ফলে প্রায় চারঘণ্টা বিদ্যুৎ বিহিনী অন্ধকারে থাকতে হয়েছে বরিশালের পাঁচটি উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহককে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি—১ এর আওতাধীন বরিশাল সদর উপজেলা, বাকেরগদ, মুলা হিজলা এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার গ্রাহকদের বিদ্যুৎ শাটডাউন রাখা হয়।
দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রাহকদের ভিড় বাড়তে থাকে নগরীর রূপাতলী এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয়ের সামনে। ক্ষোভের সৃষ্টি হয় তাদের মধ্যে। খবর পেয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি—১ কার্যালয়ে ছুটে যান বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনসহ সেনাবাহিনী এবং পুলিশ ।
কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয়ের সদর দরজায় সেনা মোতায়েন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসক ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে দুপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংশ্লিষ্টরা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ২০ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা জরুরি সেবা বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করা, নিয়ন্ত্রণকারী কতৃর্পক্ষ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্দেশনার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং দাপ্তরিক শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন।
এজন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্মচারী চাকরি বিধি ১৯৯২ (সংশোধিত, ২০১২)-এর বিধান অনুযায়ী গত ১৬ অক্টোবর দুপুর থেকে জনস্বার্থে তাদের ২০ জন কর্মকর্তার চাকরি অবসান করা হয়। চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি—১ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. হুমায়ুন কবীর।
তিনিসহ ২০ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার খবর বৃহস্পতিবার বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয়ে ছড়িয়ে পড়লে কর্মকর্তা—কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এমনকি প্রতিবাদ স্বরূপ সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি—১ এর অধীনে থাকা পাঁচটি উপজেলার বিদ্যুৎ শাটডাউন করে দেয়া হয় ।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সদর দপ্তরের উপ—পরিচালক মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘শুধু বরিশালেই নয়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ শাটডাউন করে দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে বরিশালে সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে বিদ্যুৎ শাটডাউন করা হয়।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি—১ কার্যালয়ে এসেছিলেন। তাছাড়া সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন। সেখানে আমিও উপস্থিত ছিলাম।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীদের কিছু দাবি রয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলো দাবি এরই মধ্যে মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন তারা তাদের চাকরি জাতীয় করণের দাবি তুলেছেন। এক সঙ্গে সারাদেশে এতোগুলো কর্মচারীকে সরকারি করা কিভাবে সম্ভব? আমরা বলেছি, কর্মচারীদের দাবি থাকতেই পারে। এজন্য তারা আন্দোলন করবে, এটা তাদের অধিকার। তবে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে, বিদ্যুৎ সেবা বন্ধ রেখে আন্দোলন চলবে না। এসব বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে আলোচনা হয়েছে। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।
জানা গেছে, ‘দেশের ৬৪টি জেলায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আছে। এসব সমিতিতে কর্মরত আছেন প্রায় ৪৫ হাজার কর্মকর্তা—কর্মচারী। তারা দেশের ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন। মোট গ্রাহকের হিসাবে এটি প্রায় ৮০ শতাংশ।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা—কর্মচারীরা বোর্ডের কাছে কিছু দাবি জানিয়ে আসছিলেন। দাবি আদায়ে প্রায় ১০ মাস ধরে তারা আন্দোলন করছিলেন। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এমন ২০ জন কর্মকর্তাকে বুধবার চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
তাদের চাকরিচ্যুত করার আদেশ প্রত্যাহারসহ পূর্বের দাবি আদায়ে বিদ্যুৎ শাটডাউন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এমনকি রবিবার ঢাকায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ঘেরাও করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।