ছাত্রদের ‘প্রতিবন্ধী প্রজন্ম’ বলা অধ্যক্ষের গ্রেপ্তার দাবিতে প্রভাষকের অনশন

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:১০
প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না। ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধী প্রজন্ম বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) পোস্ট দেওয়া অধ্যক্ষের গ্রেপ্তারের দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করেন ওই কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না।
গতকাল রবিবার (২০ অক্টোবর) দুপুর ১২ থেকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন শুরু করেন। পরে সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে তিনি অনশন ভাঙেন।
জানা গেছে, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার মানিক গত জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন তার নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি লেখেন, যারা আন্দোলন করছে তারা হলো প্রতিবন্ধী প্রজন্ম। এই স্টাটাসের দেয়ায় অধ্যক্ষ মানিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাকে উত্তর বাংলা কলেজ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে অনশনে বসেন তাবাসসুম। পরে সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার ও পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম এসে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিলে তিনি অনশন ভঙ্গ করেন।
এসময় প্রভাষক তাবাসসুম বলেন, সন্তানতুল্য ছাত্রদের আন্দোলনকে যিনি প্রতিবন্ধী প্রজন্ম বলে দাবি করে পোস্ট করেছেন সেই অধ্যক্ষকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত ও গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত অনশন চলবে। এতে আমার মৃত্যু হলেও হবে। আবু সাঈদরা পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। সেই শহীদের আত্মার শান্তির জন্য আওয়ামী দোসরের গ্রেপ্তারের আন্দোলনে আমি জীবন দেব।
অভিযোগ উঠেছে যোগদানের পর থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর অনৈতিক আচরণ করে নানাভাবে হয়রানি করছেন অধ্যক্ষ মানিকে। তার শক্তির প্রধান উৎস ছিলেন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ। অধ্যক্ষ মানিক তার নিজের অফিসকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পরিণত করেছিলেন।
আরও অভিযোগ রয়েছে, অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রভাষক তাবাসসুমকে সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং রংপুর সাইবার ট্রাইবুনালে একটি মামলা করেন। এতেও থেমে থাকেননি তিনি। তাবাসসুমকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু করেন। পরবর্তীতে শিক্ষক তাবাসসুম উচ্চ আদালতের দারস্থ হলে তা স্থগিতের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও তদন্ত করে অনিয়ম দুর্নীতির সত্যতা পেয়ে অধ্যক্ষ মানিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন অধ্যক্ষ মানিক। তাবাসসুমকে কলেজে প্রবেশেও বাধা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বেতন ভাতাও প্রদান করছেন না। সেই সঙ্গে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন প্রভাষক তাবাসসুম।
অধ্যক্ষ মানিককে বরখাস্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এ প্রভাষক।
এরপরও ব্যবস্থা না নেওয়া হয়নি। তাই ন্যায়বিচার পেতে রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গেটে অনশন শুরু করেন তিনি।