Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

চেয়ারম্যানের পেটে ৮১ টন চাল

Icon

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৩৯

চেয়ারম্যানের পেটে ৮১ টন চাল

দেবীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় (ইনসেটে চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম এমু)। ছবি: পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রায় ১৮ মাস থেকে নিয়ম মেনে চাল উত্তোলন হচ্ছে। কিন্তু যার নামে চাল বরাদ্দ হয়েছে তিনি এসবের কিছুই জানেন না। ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচিতে এমনই কেলেঙ্কারি ঘটেছে জেলার দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নে। ৭৩৮ জনের মধ্যে প্রায় ১৫০ জন সুবিধাভোগী জানেই না তাদের নামে গত ১৮ মাস ধরে চাল উত্তোলন হচ্ছে নিয়মিত। সেই হিসেবে গত ১৮ মাসে ৮১ টন (৮১ হাজার কেজি) চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। 

সম্প্রতি ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের পর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম এমু গা ঢাকা দেন। পরে আব্দুল মজিদ প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিষয়টি সামনে আসে।

সরেজমিন ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এর সত্যতা মিলে। মালচণ্ডি মাস্টারপাড়া এলাকার রুপালী বলেন, অনলাইনে আবেদনের পর থেকি আর কোন খবর পাই নাই। কয়দিন আগত হামার মেম্বার আসি কার্ডের কথা কইলে পরে দুই বস্তা চাউল পাইছি। 

ওকড়াবাড়ি এলাকার সমুনা রানী বলেন, এর আগে আমরা চাল পাইনি। গত মাসে শুধু দুই বস্তা পাইছি।

নজিরনপাড়ার শাহেনা বেগম বলেন, আগে কার্ডের কথা জানতাম না। গেল মাসে প্রথম দুই বস্তা চাল পাইছি। 

বসুনিয়াপাড়ার মিরা বলেন, গণ্ডগোলের পর জানছি আমাত নামে কার্ড হইছে। এই মাসেরটাসহ তিন মাস চাল পাইছি। 

সাহাপাড়া এলাকার জবেদা খাতুন বলেন, আংগোর কথা কইয়া চাইল তুইলা খাইছে। এতদিন কইছিল কার্ড হয় নাই।

একাধারে ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষকলীগের সম্পাদক এবং পঞ্চগড়-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম সুজনের উকিল জামাই হওয়ায় ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করতেন চেয়ারম্যান। ভিডব্লিউবির চূড়ান্ত তালিকা এতদিন তিনি ইউপি সদস্য বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাউকে দেননি।

পরিষদের একাধিক সদস্য জানান, গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত ১৫০ জন কার্ডের বিপরীতে কোন চাল পায়নি। ওয়েবসাইটে তাদের নাম থাকলেও চেয়ারম্যান তা গোপন করেন। ৫ আগস্ট পরিষদের নথিপত্র ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সম্প্রতি উপজেলা মহিলা বিষয়ক দফতর থেকে ভিডাব্লিউবি এর তালিকা উত্তোলন করা হয়। পরে চলতি অর্থবছরে জুলাই ও আগস্ট মাসের বরাদ্দকৃত ভিডব্লিউবির চাল বিতরণের সময় প্রায় ৩০০ বস্তা চাল উদ্বৃত্ত দেখতে পান তারা। পরে প্যানেল চেয়ারম্যান ইউনিয়ন বিএনপি-জামায়াতের সহযোগিতায় অনলাইন থেকে কার্ডধারীদের তালিকা নিয়ে সুবিধাভোগীদের ডেকে এনে চাল বিতরণ করেন।

সেখানকার ট্যাগ অফিসার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী চেয়ারম্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তিনি বলতেন- আমার সামলানোর ব্যাপার আমি সামলাবো। আপনারা উদ্বোধন করে দিয়ে চলে যান। এখানে আপনাদের বেশি খবরদারি করার দরকার নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তুরাব হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জানান, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে চাল বিতরণের সময় প্রায় দেড়শ জনের নামে চাল তোলা হলেও, তারা চাল নিতে ইউনিয়ন পরিষদে আসেননি। পরে আমরা তাদেরকে খুঁজে বের করে চাল দিয়েছি। ইতিমধ্যে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের অসচ্ছল নারীদের (কার্ডধারী) মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ৭৩৮ জন কার্ডধারী রয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫