কোটাবিরোধী আন্দোলনে শহিদ রাব্বি
‘ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ কাঁধে নিয়ে পালিয়েছি’

মাদারীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০:০২
-671a535d3bb6a.jpg)
কোটাবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ইসমাইল হোসেন রাব্বি। ছবি: মাদারীপুর প্রতিনিধি
কোটাবিরোধী আন্দোলনে শহিদদের একজন মাদারীপুর জেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের সন্তান ইসমাইল হোসেন রাব্বি। রিকশাচালক বাবা মিরাজ তালুকদার ও মা পারভীন বেগমের সংসারে দুই মেয়ে ও একছেলে মধ্যে তিনিই সবার ছোট। টানাটানির সংসারে টিউশনি করে চালাতেন নিজের খরচ। বোনদেরও হাত খরচ দিতেন সাধ্যমত। অভাবের সংসারে বড় হলেও কমতি ছিল না ভালবাসায়।
নিজের পরিবারকে নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখতেন রাব্বি। পড়তেন শরীয়তপুর পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ২য় বর্ষে। তার মনের আশা ছিল পড়ালেখা শেষ করে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সংসারের অভাব দূর করবেন। বাবাকে আর রিকশা চালানো লাগবে না। বোনদের বিয়ে দেবে। কিন্ত তার সেই স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে গেছে।
১৭ জুলাই প্রথম ঢাকায় এসে আন্দোলনে যোগ দেন রাব্বি। ৪ আগস্ট আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। গুলি তার কপাল দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়।
রাব্বির পরিবার জানায়, স্বৈরাচারের অস্ত্রের মুখে আবু সাইদ-মুগ্ধদের নিজের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিতে দেখে রাব্বি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেন নি। সোজা এসে যোগ দেন শাহবাগের কোটাবিরোধী আন্দোলনে। ১৭ জুলাই থেকে প্রতিদিনই যেতেন কোটা আন্দোলনে। কিন্তু ৪ আগস্ট শাহবাগের আন্দোলনে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে মেলে রাব্বির মরদেহ।
ঘটনার বিশদ জানতে চাইলে- ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সহায়তায় হাসপাতালের মর্গ থেকে ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ নিয়ে পালিয়ে আসি’, বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ওঠেন রাব্বির দুই বোন। বাবা-মার চোখেও টলমল করতে থাকে জল।
রাব্বির বাবা মো. মিরাজ তালুকদার কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল সে ইঞ্জিনিয়ার হবে। স্বপ্ন স্বপ্নই হয়ে রয়ে গেল, তার স্বপ্ন পূরণ আর হলো না।
রাব্বির মা আসমা বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি পুলিশের গুলিতে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই— আমার ছেলেকে নির্মম ভাবে মাথায় গুলি করে মারা হয়েছে। রাব্বি আমার একমাত্র ছেলে ছিল।
রাব্বির বোন মিম আক্তার কেঁদে কেঁদে বলেন, ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ কাঁধে নিয়ে পালিয়েছি, পরে যদি ভাইকে না দেয়- এই ভয়ে। ভাই আমার কলিজা ছিল। সেই কলিজাকে গুলি করে মারা হয়েছে। আমি শুনছি ভাইটা গুলি লাগার পরে একটা কথাও বলতে পারেনি।
তারা জানায়, রাব্বির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজে রাখা হয়েছিল। আন্দোলনে আসা রাব্বিকে না পেয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায় পরিবারটি। পরে ৫ আগস্ট নানাভাবে খোঁজ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে থেকে উদ্ধার করে রাব্বির গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সহায়তায় রাব্বির লাশ আনা হয় মাদারীপুরে। সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের পাঁচখোলা গ্রামে ২নং ওয়ার্ডে পারিবারিক কবরস্থানে রাব্বিকে দাফন করা হয়।
এলাকাবাসী জানায়, ছেলেহারা শোক ভুলতে পারছে না পরিবার। রাব্বি অনেক মেধাবী ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার হয়ে পরিবারের হাল ধরা তার স্বপ্ন ছিল। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে গরীব অসহায় এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানো জোর দাবি জানান।
পাশাপাশি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদ রাব্বির যথাযথ মর্যাদা ও সরকারিভাবে হত্যার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হবে- এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।