Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাজশাহীর তামান্না

Icon

শাহিনুর রহমান সোনা, রাজশাহী

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৭

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাজশাহীর তামান্না

রাজশাহীর তামান্না। ছবি: রাজশাহী প্রতিনিধি

পড়াশোনা শেষ করে তামান্না তার পেশাগত জীবন শুরু করেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে, অটোমোবাইল শিল্পে। এখান থেকে তামান্না চলে যান বায়োটেক ইন্ডাস্ট্রিতে, একজন ‘কন্টিনিয়াসইম্প্রুভমেন্ট স্পেশালিস্ট’ হিসেবে, যেখানে তার দায়িত্ব ছিল কাজের মান ও দক্ষতা বাড়ানো, এবং এই খাতে নতুন উদ্ভাবন আনা। এরপর পৃথিবীর সবচাইতে বড় অনলাইন বিক্রেতা অ্যামাজন তামান্নাকে তাদের অংশ করে নেয় ২০২১ সালে। 

কোভিড-১৯-এর সময় অন্য অনেকের মতোই তখন তার কাজ ছিল অনলাইনে, যদিও তামান্না তখন থাকতেন মিশিগান অঙ্গরাজ্যে। তার কর্মদক্ষতার কারণে ২০২৩ সালে তাকে টেনেসির পরিবর্তে সিয়াটল, ওয়াশিংটনে- অ্যামাজনের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টারে স্থানান্তর করা হয়, কাস্টমার সার্ভিস অপারেশনটিমে। সেখানে তিনি নেতৃত্ব দেন ৮০ হাজার কাস্টমার সার্ভিস এজেন্টদের জন্য একটি বিশ্বব্যাপী মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েল বিয়িং প্রোগ্রাম চালু করতে, যাতে তাদের কাজের পরিবেশ আরও ভালো করা যায়। এখানে সফলতার জন্য তার এই কাজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায় এবং তামান্নাকে মেন্টাল হেলথ নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়।

আমাজনে যারা কাজ করে তাদের আমাজোনিয়ান বলা হয়, একজন আমাজোনিয়ান হিসেবে তামান্না আমাজনে কর্মরত থাকা অবস্থাতেই আমাজন রেইনফরেস্ট ঘুরে আসেন। উল্লেখ্য, খুব কম মানুষই আমাজন রেইনফরেস্ট যান আমাজোনিয়ান হিসেবে। বাংলাদেশি এবং একজন নারী হিসেবে, এটা একটি গর্বের বিষয়।

এ বছর তামান্না যোগ দিয়েছেন পৃথিবীর একটি বৃহত্তম বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে-যেখানে বিমানের উইং তৈরির কাজে সাহায্য করছেন এবং এয়ারোস্পেস খাতে দক্ষতা অর্জন করছেন। 


সমাজসেবা

প্রফেশনাল জীবনের পাশাপাশি তিনি আলোচনায় আসেন, সামাজিক কাজে তার অবদানের জন্য। সমাজসেবায় সংশ্লিষ্ট থাকার জন্য, ইউনাইটেড ওয়ে নামের একটা সংস্থা তাকে এবং তার টিমকে সম্মান জানিয়ে স্থানীয় একটি বিলবোর্ডে তার ছবি প্রকাশ করে। বলে রাখা ভালো যে, ইউনাইটেড ওয়ে বিশ্বব্যাপী তাদের সমাজসেবামূলক কাজের জন্য পরিচিত এবং প্রশংসিত।

বিগ ব্রাদার্স বিগ সিস্টার্স প্রোগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন তামান্না, যেখানে তিনি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মেন্টর করেছেন। এ ছাড়াও ওয়াইডব্লিউসিএতে যৌন নিপীড়নে নির্যাতিতদের সহায়তা প্রদানকারী হিসেবেও কাজ করেছেন। 

সোসাইটি অব উইমেন ইঞ্জিনিয়ার্স (এসডব্লিউই) নামের সংগঠনকে বলা হয় মেয়েদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া এবং এই ক্ষেত্রে তাদের কাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পৃথিবীর সব চাইতে বড় সংগঠন। মিশিগানে থাকার সময় তামান্না এসডব্লিউইয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই বছর দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। সেখানে তিনি মিডল স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের এসটিইএম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত) পড়তে উৎসাহিত করতেন এবং এখনও তিনি সিয়াটলের এসডব্লিউই চ্যাপ্টারে সদস্য হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। 

ব্যক্তিগত অর্জন ও আগ্রহ

তামান্নার ব্যক্তিগত অর্জনগুলোও তার পেশাগত সাফল্যের মতোই উল্লেখযোগ্য। পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়, তামান্নার প্রফেসর তার লেখা একটা বইয়ের প্রচ্ছদে তামান্নাকে থাকার অনুরোধ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, সেই প্রফেসর পরে তামান্নাকে ক্লাসের টিচিং অ্যাসিস্টান্ট হিসেবে নিয়েছিলেন সেই কোর্সে তার সাফল্যের জন্য। 

বয়স ৩০ হওয়ার আগেই পৃথিবীর সাত মহাদেশ ঘুরে দেখার ইচ্ছা ছিল, ঠিক সেটিই তামান্না করে ফেলেছেন ২০১৯-এর মধ্যে। বাংলাদেশি শাড়ির প্রতি তার ভালোবাসা তাকে অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলে শাড়ি পরে ছবি তুলতে উদ্বুদ্ধ করে এবং তামান্না ঠিক সেই কাজটাই করেন সুদূর অ্যান্টার্কটিকায়, যা আজ পর্যন্ত আর কোনো বাংলাদেশি মেয়ে করতে পেরেছে বলে জানা নেই। 

তামান্না মেন্টাল ওয়েলবিয়িং, ডাইভারসিটি, ইকুইটি এবং ইনক্লুশনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং কর্ম এবং সামাজিক জীবনে এসব বিষয়ে তিনি সোচ্চার। 

তামান্না আমেরিকান ‘স্মুথ অ্যান্ড রিদম’ নাচেও পারদর্শী এবং যেখানে তিনি অ্যাডভান্সব্রোঞ্জ লেভেল পর্যায়ে পারফর্ম করেন।

তিনি বলেন, একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বড় হয়ে এবং সারা জীবন কাছের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যুদ্ধ করে, আমি সব সময় চেয়েছি, যেন অন্য মেয়েরা নিজেদের সব শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে শৃঙ্খলগুলো হয় আমাদের মনের। এটা বুঝতে পারাটাও একটা বড় বিজয়। নিজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫