মেঘনা নদী থেকে অবাধে চলছে বালু লুট, নির্বিকার প্রশাসন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:৩২

মেঘনা নদী থেকে অবাধে লুট হচ্ছে বালু। ছবি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মেঘনা নদী থেকে অবাধে লুট হচ্ছে বালু। ইজারা ছাড়াই প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার প্রভাবশালী একটি চক্র। এতে করে সরকার যেমন বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয় কয়েকটি গ্রাম। এছাড়া চড়া মূল্যে বালু মহাল ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানও বিপাকে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে চলছে এই লুটতরাজ। এছাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওই চক্রের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীনগর উপজেলার পশ্চিম ইউনিয়নের চরলাপাং এলাকায় মেঘনা নদী থেকে প্রতিদিন ৫-৭টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর এলাকার একটি বালুখেকো চক্র। প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। বাজারমূল্য অনুযায়ী উত্তোলিত বালুর মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। গত প্রায় ২০ দিন ধরে অবাধে বালু লুট করছে রায়পুরার ওই চক্রটি। আর এই চক্রের নেতৃত্বে আছেন রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও মির্জাচর গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম। তার সঙ্গে মির্জাচরের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন বিএনপির কয়েকজন নেতাও আছেন।
অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে- চরলাপাং, সাহেবনগর, নাসিরাবাদ, রায়পুরার মির্জাচর ও শান্তিপুর ও কয়েকটি গ্রাম। এসব গ্রামের বাসিন্দারা নদীগর্ভে ঘর-বাড়ি বিলীন হওয়ার আতঙ্কে সময় পার করছেন।
চরলাপাং গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গত ১৫-২০দিন ধরে রায়পুরার লোকজন চরলাপাং সীমানা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এর ফলে গ্রামের নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছেন। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অবাধে বালু উত্তোলনে ফলে নদীর পাড়ে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, চরলাপাং গ্রামের বেশিরভাগ অংশ নদীবেষ্টিত। অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে কৃষি জমি ও ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষজন এসে প্রতিনিয়ত অভিযোগ জানাচ্ছেন। বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানানো হলে তিনি প্রশ্ন রাখেন যে- আমি কি নদীতে গিয়ে বসে থাকব? আমাদের এলাকা যেন বাঁচে, সেজন্য প্রশাসন যেন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে- সেই দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে মেঘনা নদীর জাফরাবাদ বালু মহালটি প্রায় ৭০ কোটি টাকায় ইজারা নিয়ে বিপাকে পড়েছে মুন্সি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ইজারার এক বছরের মধ্যে ইতোমধ্যে ছয় মাস চলে গেছে। তবে ইজারা মূল্য দিতে বিলম্ব হওয়ায় বালু উত্তোলন করতে পেরেছে মাত্র তিন মাস। এ অবস্থায় এই বালু মহালে বালুর জন্য আসা ক্রেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রায়পুরার বালুখেকো চক্রটি নিজেদের কাছ থেকে বালু কেনার জন্য বাধ্য করছে বলে অভিযোগ করছেন মুন্সি এন্টারপ্রাইজের লোকজন।
মুন্সি এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নবীর হোসেন বলেন, আমরা যে টাকা দিয়ে বালুমহাল ইজারা নিয়েছি- সেই টাকা তুলতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। এর কারণ হলো চরলাপাংয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। আশপাশের এলাকা থেকে যেসব ক্রেতারা বাল্কহেড নিয়ে আমাদের কাছে যারা বালু কিনতে আসেন- তাদেরকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নিজেদের কাছ থেকে বালু কিনতে বাধ্য করে রায়পুরার চক্রটি। এটির প্রতিকারে জেলা প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে মদদ এবং কমিশন নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে নবীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবু মুছার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এ বিষয়য়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জেসমিন সুলতানা বলেন, ইজারা এলাকার বাইরে থেকে কারও বালু উত্তোলন করার সুযোগ নেই। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ড্রেজার জব্দসহ আর্থিক জরিমানা করা হয়। শীঘ্রই এ বিষয়ে বৃহৎ আকারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।