
পানিফল সংগ্রহ করছে কৃষক। ছবি: নাটোর প্রতিনিধি
শীত আসতে না আসতেই পানিফল সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন নাটোরের সিংড়ার চলনবিল অঞ্চলের কৃষক। অল্প খরচে লাভবান হওয়ায় প্রায় দুই দশক ধরে এই এলাকার কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে শীতের জলজ ফলের চাষ করছেন। এ বছর আগাম চাষ করায় শীতের শুরুতেই ফল ধরা শুরু করেছে। তাই জমি থেকে ফল সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক।
কৃষকরা বলছেন, শীতের শুরুতে বাজারে ফলের চাহিদা বেশি থাকে। দামও বেশি পাওয়া যায়। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে লাভবান হওয়ার আশা করছেন তারা।
সরেজমিনে সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের কৈগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে পানিফল সংগ্রহ করছেন কৃষক। প্রতিবছর এ গ্রামে ন্যূনতম ৮ থেকে ১০ জন কৃষক পানিফল চাষ করেন। এ বছর তাদের পানিফল চাষের জমির পরিমাণ প্রায় ২০ থেকে ২২ বিঘা। গত দুই দশক ধরে এই গ্রামের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আর্থিকভাবে পিছিয়ে-পড়া অনেক প্রান্তিক কৃষকের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, পানিফলের মৌসুম শুরু হলে বিভিন্ন জেলা শহর থেকে পাইকাররা আসেন এ গ্রামে। এলাকায় এ গ্রামকে কেউ কেউ পানিফলের গ্রাম নামেও চেনেন। প্রায় ৩০ বছর আগে কৈগ্রামে প্রথম পানিফলের চাষ শুরু করেন কৃষক রইচ উদ্দিন (৬১)। তার সফলতা দেখে অনেকেই ঝুঁকে পড়েন পানিফল চাষে।
রইচ উদ্দিন জানান, পুকুর, ডোবা, নালায় যেখানে মাছ ও ধান চাষ হয় না, বর্ষাকালে অল্প পানি থাকে- এমন পতিত নিচু জমিতে পানিফলের চাষ ভালো হয়। অল্প খরচে লাভ বেশি হলেও পরিশ্রম করতে হয় বেশি এ ফল চাষে। বিশেষ করে প্রতিদিনই জমি থেকে ফল সংগ্রহ করতে হয়। আমি অন্য কোনো আবাদ করি না। প্রতিবছরই দুই-এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে পানিফলের চাষই করি। এ বছর এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে চাষ করেছি। সাত হাজার টাকা লিজসহ আমার মোট খরচ ১২ হাজার টাকা। নিজে পরিশ্রম করি তাই শ্রমিক খরচ কম।
এ বছর রইচউদ্দিন এ জমি থেকে খরচ বাদে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করার আশা করছেন। ওই গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ, ইদ্রিস আলী ও শহিদ হোসেন জানান, এবার ফলন ও বাজারমূল্য দুটোই ভালো। পানিফল এক হাজার ৬০০শ থেকে দুই হাজার টাকা প্রতি মণ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। বাজার ঠিক থাকলে গত বছরের চেয়ে এবার বেশি লাভের আশা করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ বলেন, সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের কৈগ্রামসহ পৌরসভার চক সিংড়া, সোহাগ বাড়ি, তাজপুর, কলম এবং শেরকোল ইউনিয়নের পতিত ও নিচু জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কৃষকরা পানিফল চাষ করছেন। এতে খরচ ও পরিশ্রম কম, লাভ বেশি। এ ছাড়া এ ফল চাষে রোগবালাই নেই বললেই চলে। তাই পানিফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। উপজেলা কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকদের পাশে থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।