Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা ‘দুর্নীতির সম্রাট’ ফারুক চৌধুরী

Icon

জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:২৮

হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা ‘দুর্নীতির সম্রাট’ ফারুক চৌধুরী

সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ চৌধুরীর। ছবি: জামালপুর প্রতিনিধি

জামালপুরের ‘দুর্নীতির সম্রাট’ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিগত সরকারের আমলে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিসহ লুটপাট হয়েছে কোটি কোটি টাকা।

ফারুক চৌধুরী নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ চক্র এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, পানি উন্নয়ন বোর্ড, শিক্ষা প্রকৌশল, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, জেলা পরিষদ, খাদ্য অধিদপ্তর, পৌরসভা, বিএডিসিসহ সরকারি অফিসের সব কাজ বাগিয়ে নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করে বিল পাস করিয়ে নিয়েছেন।

নিজে, স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যসহ নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সামান্য হাঁচি-কাশিতেই জামালপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাজধানীর বিলাসবহুল প্রাইভেট হাসপাতালে দৌড় দিতেন।

একাধিক সূত্র জানায়, জামালপুর জেলায় অন্তত ৭০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এখনো চলমান রয়েছে অনেক প্রকল্পের কাজ। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ঘিরে টানা দেড় যুগ সক্রিয় ছিল দুর্নীতিবাজ চক্রটি। হাজার হাজার কোটি টাকা নয়-ছয় করে এখন লাপাত্তা ফারুক চৌধুরী।

চৌধুরীর নেতৃত্বে দুর্নীতিবাজ চক্র নিয়ে যেন কোনো টুঁ-শব্দ না হয় সেজন্য কৌশলে জেলা শহরে সাংবাদিকদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে রাখেন। মোটা অঙ্কের অনুদান দিয়ে একাধিক সংগঠন বানিয়ে সাইনবোর্ড তুলে দেন এই চৌধুরী। পছন্দের লোকদের বাড়ি-গাড়ি করে দিতে ব্যয় করেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। অভিযোগ উঠেছে, কথিত গণমাধ্যম সংগঠন পরিচালিত হয় আত্মগোপনে থাকা ফারুক আহমেদ চৌধুরীর অর্থেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বড় বড় প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগ কাজ পেত তমা কনস্ট্রাকশন, ভাওয়াল কনস্ট্রাকশন ও চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। ঠিকাদারি কাজ বাগানো ও ভাগবাটোয়ার সম্রাট হিসেবে আবির্ভূত হন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও  জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ চৌধুরী।

এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, শিক্ষা প্রকৌশল, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যমুনা সার কারখানা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন কাজে নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহার, ভুয়া বিল-ভাউচার ও দুর্নীতি করে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

জামালপুর জেলার সরকারি সব সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই ছিল। প্রভাব খাটিয়ে তিনি সরকারি সব কাজ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। উল্লেখিত তিনটি প্রতিষ্ঠান বাদে তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাজ করতে পারেননি। তমা কন্সট্রাকশন, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ এবং ভাওয়াল কনস্ট্রাকশনের লাইন্সেস ব্যবহার করে জেলার বড় বড় উন্নয়ন কাজ তিনি একাই বাগিয়ে নেন।

এছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ, শেখ হাসিনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য করেন বিগত ১৫ বছর। এভাবেই তিনি কম সময়ে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হন। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি দপ্তরের অর্থ লোপাটে ফারুক আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন জামালপুর এলজিইডির তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী সায়েদুজ্জামান সাদেক। অভিযোগ রয়েছে, জামালপুর এলজিইডির কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত একটি চেয়ারে বসেই টেন্ডারবাজির কাজ করতেন চৌধুরী।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ফারুক আহমেদ চৌধুরীর জামালপুর শহরে তিনটি বিলাসবহুল বাড়ি, শ্যামগঞ্জ কালীবাড়ি এলাকায় একটি ইটভাটা, শেরপুর জেলায় শত বিঘা জমির মৎস্য খামার, মেলান্দহ উপজেলায় আটপাড়া বাজারে মার্কেট, ঝাউগড়ায় মার্কেটে ২৮টি দোকান, ঢাকার মনিপুরী পাড়া, মিরপুর ডিওএইচএসএস ও লালমাটিয়ায় ৫টি ফ্ল্যাটসহ নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার সম্পদ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জামালপুর পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে তার স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ও নিজের নামে শত বিঘা জমি রয়েছে। শহরের বকুলতলা চত্বরের চারপাশে রয়েছে তার শত কোটি টাকা মূল্যের জমি এবং ০.৩৪ শতাংশ সরকারি জমি থেকে হিন্দু পরিবারকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে নিজ নামে লিজ নিয়ে ঘর বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন।

এ ছাড়া বিভিন্ন মহাসড়কে ফারুক আহমেদ চৌধুরীর দূরপাল্লার চার ধরনের বিলাসবহুল বাস এখনো চলাচল করে। নিজে, তার স্ত্রী ও সন্তানদের প্রত্যেকই ব্যবহার করেন কোটি টাকা মূল্যের একাধিক গাড়ি। জেলা শহরে নিজে ও পরিবারের কারো চিকিৎসা নিতেন না তিনি। সামান্য হাঁচি-কাশিতেই জামালপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাজধানীর বিলাসবহুল প্রাইভেট হাসপাতালে দৌড় দিতেন।

অভিযোগ উঠেছে, জেলা বাস ও ট্রাক মালিক সমিতির নামে প্রতি মাসে ৫/৭ লাখ টাকা এবং ইটভাটা মালিক সমিতির নামে চাঁদা তুলে একাই পকেটে ভরতেন বলে অভিযোগ রয়েছে মালিকপক্ষের।‌ ডায়াগনস্টিক ও প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রকও ছিলেন তিনি। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় জামালপুরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ কয়েকগুণ বেশি নির্ধারণ করে রেখেছিলেন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পুরোসময়ই তিনি ওইসব সংগঠনের সভাপতি ছিলেন।

দেশের বৃহত্তম ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানায় তার নেতৃত্বে সিন্ডিকেট অ্যামোনিয়া গ্যাস বিক্রি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, সার পরিবহন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্নভাবে লুটে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। ফারুক চৌধুরীর নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক। চৌধুরীর আশীর্বাদে রফিকুল ইসলাম নিজেও পাড়ার পাতি মাস্তান থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফারুক আহমেদ চৌধুরী মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫