Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

আয়নাঘরের রূপকার জিয়াউলের অবৈধ মার্কেট গুঁড়িয়ে দিল সড়ক বিভাগ

Icon

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২০:১৭

আয়নাঘরের রূপকার জিয়াউলের অবৈধ মার্কেট গুঁড়িয়ে দিল সড়ক বিভাগ

মার্কেটটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়েছে সড়ক বিভাগ। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

বরিশাল সড়ক বিভাগের জমি লিজের নামে দখল করে বিশাল মার্কেট গড়ে তুলেছিলেন দেশের বর্তমান সময়ের আলোচিত আয়নাঘরের রূপকার সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। এমনকি লিজ বাতিলের পরও ক্ষমতার প্রভাবে এতিমখানার নামে মার্কেটটি দখলে রাখেন তিনি।

অবশেষে সেই অবৈধ মার্কেটটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে সড়ক বিভাগ। আজ সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে নগরীর রূপাতলী এলাকায় সমাজসেবা কার্যালয়ের সামনে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।

এসময় জিয়াউল আহসানের নিয়ন্ত্রণে থাকা মার্কেটের ২৬টি দোকানসহ সাগরদী ব্রিজ থেকে রূপাতলী জিরো পয়েন্ট, কালিজিরা এবং দপদপিয়া পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে প্রায় ৩০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

অভিযানের নেতৃত্ব দেন- বরিশাল সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম। এসময় জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং বিদ্যুৎ বিভাগ তাকে সহযোগিতা করেন।

মার্কেটের ব্যবসায়ী এবং স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইতিপূর্বে র‌্যাব-৮ এর সদর দপ্তর ছিল রূপাতলী এলাকায়। বর্তমান সমাজসেবা ভবনে অস্থায়ীভাবে চলতো র‌্যাব-৮ এর কার্যক্রম। তখন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ছিলেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।

তার ক্ষমতার আমলে তৎকালীন র‌্যাব-৮ সদর দপ্তরের সামনে সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমিতে জিয়াউল আহসান গড়ে তোলেন একটি মার্কেট। যার নাম দেয়া হয় ‘এতিমখানা মার্কেট’। মার্কেটের ২৬টি স্টল ভাড়া দেয়া হয় চড়া দামে। নেয়া হয় মোটা অংকের জামানত।

মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জিয়াউল আহসানের বড় ভাই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল হকের নামে ছিল মার্কেটটি। দোকান ভাড়া এবং চুক্তি সবকিছুই হতো তার নামে। তবে ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন র‌্যাব-৮ এর ডিএডি কামরুল সিকদার। আর ভাড়ার টাকা জমা নিতেন জিয়ার ছোটভাই বরিশাল সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক প্যানেল মেয়র জিয়াউর রহমান বিপ্লব।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হন জিয়াউল আহসান। সেই সাথে আত্মগোপনে চলে যান জিয়াউল হক, জিয়াউর রহমান বিপ্লব এবং র‌্যাবের ডিএডি কামরুল সিকদার।

তাদের অবর্তমানে অবৈধ মার্কেটটি দেখভাল করছেন তাদেরই বোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পাখি আক্তার। তবে মার্কেট ভাড়া নেয়ার সময় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রাখা কোটি টাকার বেশি জামানত ফেরত দেয়নি জিয়াউল পরিবার।

মার্কেটের ব্যবসায়ী ভোজন বিলাস নামের হোটেলের ভাড়াটিয়া আল আমিন মল্লিক জানান, ২০১৬ সালে তিনি ১২ লাখ টাকা চুক্তিতে মার্কেটের স্টোল ভাড়া নিয়েছেন। র‌্যাবের ডিএডি কামরুল সিকদারের মধ্যস্ততায় চুক্তি হয়েছে শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল হকের সাথে।

তিনি জানান, গত ৫ আগস্টের পর জিয়াউল আহসান গ্রেপ্তারের পর আত্মগোপনে চলে যান ডিএডি কামরুল। তবে গত ১ নভেম্বর হঠাৎ করেই দোকানে লেক পাঠান কামরুল। মার্কেটের জমি সড়ক জনপদ বিভাগের নয় জানিয়ে তার কাছ থেকে আরও ১০ লাখ টাকা নিয়ে যান তিনি। তারা জানান ওই জমি সমাজসেবা বিভাগ থেকে লিজ নেয়া।

মার্কেটের ফার্মেসি ইশান মেডিকেলের মালিক শাহিনুর বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরও মার্কেট থেকে নিয়মিত ভাড়া আদায় করেছেন ডিএডি কামরুল। তিনি আত্মগোপনে থেকে লোক পাঠিয়ে ভাড়া আদায় করেছেন। তার কাছে এখনো প্রায় চার লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। তাছাড়া মার্কেটের প্রতিজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অগ্রীম বাবদ সর্বনিম্ন ২ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত নিয়েছেন জিয়াউল আহসান।

তবে দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জিয়াউল আহসানের বোন পাখি আক্তার। তিনি জানিয়েছেন, সড়ক বিভাগের কাছ থেকে নাসির উদ্দিন এতিমখানা নামক একটি মাদ্রাসার নামে জমিটি লিজ নিয়েছিলেন তার বড় ভাই। লিজের মেয়াদ শেষে পুনরায় নবায়নের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে সেই আবেদন বাতিল করে দেয় সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

তিনি বলেন, মার্কেটে ২১টি দোকান ছিল। দোকানের প্রত্যেক ভাড়াটিয়াকে লিজ বাতিলের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তাদের দোকান ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা ছাড়েনি। আর উচ্ছেদের বিষয়টিও আমরা তাদের আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম। তাই উচ্ছেদের সময় আমাদের পরিবারের কেউ সেখানে ছিল না।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আগ্রীম বাবদ প্রায় ৪০-৪২ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। যেটা মাদ্রাসার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে। ভাই গ্রেপ্তারের পর সেই অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করা হয়েছে। যেকারণে টাকা দিতে পারছি না। সেই টাকা পরিশোধের জন্যই আমাকে বিষয়টিতে যুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে কোনভাবেই আমি মার্কেটের সাথে জড়িত নই।

বরিশাল সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম বলেন, নগরীর রূপাতলী জিরো পয়েন্ট থেকে সাগরদী ব্রিজ, কালিজিরা ব্রিজ এবং দপদপিয়া পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে নির্মাণ করা প্রায় ৩০০ দোকানপাট। এর মধ্যে কোনো কোনো জায়গা সড়ক বিভাগ থেকে লিজ দেয়া ছিল। কিন্তু লিজ নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে ভাড়া পরিশোধ করেনি। এজন্য সেগুলোর লিজও বাতিল করা হয়েছে। সড়কের জমিতে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও মাইকিং করা হয়েছে। অনেকে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছে। যারা সরিয়ে নেয়নি তাদের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কালিজিরা বাজার এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক কাফরা মার্কেটটি সড়ক বিভাগের জমিতে। এ মার্কেটের জমি সিটি করপোরেশন সড়ক বিভাগ থেকে লিজ নিয়েছিল। কিন্তু গত ১৪ বছর ধরে তারা ভাড়া পরিশোধ করেনি। এখানে মার্কেটটিতে ৮০টি দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের কথা ভেবে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এসময়ের মধ্যে স্থাপনা স্বেচ্ছায় সরিয়ে না নিলে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫