বরিশালে মানব পাচারকারী দুই ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৩২

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশালে মানব পাচার অপরাধ দমন আইনের পৃথক ধারায় দুই প্রবাসী ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৪৫ লাখ টাকা অর্থ দণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি একই মামলায় অপর এক নারীকে পৃথক ধারায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডসহ ১০ লাখ টাকা অর্থ দণ্ড দেয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বরিশাল মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সোহেল আহমেদ এই দণ্ডাদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই অপরাধী পলাতক থাকলেও আদালতের এজলাসে উপস্থিত ছিলেন দণ্ডপ্রাপ্ত নারী।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রাহুতকাঠি এলাকার বাসিন্দা মো. হারুন অর রশিদের ছেলে কাতার প্রবাসী জসিম উদ্দীন হাওলাদার, তার স্ত্রী জান্নাতুর রহমান যুথি ও ছোট ভাই ভানুয়াতু প্রবাসী পলাশ হাওলাদ।
তাদের মধ্যে দুই ভাই জসিমউদ্দীন ও পলাশকে পৃথক দুটি ধারায় যাবজ্জীবন ও ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের দণ্ড দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ভাইয়ের স্ত্রী যুথীকে পৃথক ধারায় ১৭ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লিয়াকত আলী খান ও এসএম সরোয়ার হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা জানান, মামলার বাদী বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেন। মামলার প্রধান স্বাক্ষী সজল জমদ্দার ও বাদী মোফাজ্জেল একই এলাকায় ব্যবসা করতেন। ব্যবসার সুবাধে তাদেরমধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এর জেরে সজল জানায় তার খালাতো ভাই পলাশ হাওলাদার কিউবা থাকে। তাকে কিউবা নিয়ে যাবে।
সজলের প্রস্তাবে পলাশের সাথে কথা বলে মাসে ৮০ হাজার টাকা বেতনে মোফাজ্জেলও কিউবা যেতে রাজি হয়। শর্ত অনুযায়ী সজল ও মোফাজ্জেল কথিত কিউবা প্রবাসী পলাশের ভাই জসিম উদ্দীন ও তার স্ত্রীকে মোট ২১ লাখ টাকা দেয়।
পরে ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর কলকাতা, দিল্লি, সিঙ্গাপুর ও ফিজি হয়ে ভানুয়াতু পৌঁছান তারা। সেখানে পলাশ তাদেরসহ মোট ১০ জনকে নিয়ে একটি নির্জন বাসায় আটকে রাখেন। পরে সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া নেয়ার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পলাশের ভাইসহ স্বজনদের আরো ৭ লাখ টাকা দেয়া হয়। কিন্তু তাদের অস্ট্রেলিয়া পাঠানো হয়নি। ভানুয়াতুতে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকার পর কয়েকজন পুলিশের কাছে ধরা দেয়।
পরে পুলিশ পলাশকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেয়া ১০৩ জনকেউদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন এন্ড মাইগ্রেশন এর তত্ত্বাবধানে দেশে ফিরে আসে তারা। দেশে ফিরে টাকা ফেরত চাইলে আসামিরা টাকা ফেরত দিতেঅস্বীকার করে।
এছাড়াও তাদের খুনের হুমকি দেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর মানব পাচার আইনে বরিশাল মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন মোফাজ্জেল হোসেন। মামলায় ৭ জনকে আসামি করা হয়।
এদেরমধ্যে দুই জনকে বাদ দিয়ে ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার কাজ সম্পন্ন করা হয়। বিচারক ২৩ জনের মধ্যে ১১ জনের স্বাক্ষ্য নিয়ে রায় দিয়েছেন।
মামলার বাদী মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, মামলার রায় যদি কার্যক্রর হয়, তাহলে তিনি খুশি হবেন।
তবে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মান্নান।