সেন্টমার্টিনে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠন

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ২০:৪২

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ ও দ্বীপগামী জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণবিষয়ক কমিটি গঠন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবরীনা রহমানের সই করা এক অফিস আদেশে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
এরই মধ্যে অফিস আদেশটি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
অফিস আদেশে বলা হয়, সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে থাকবেন কক্সবাজার সদর এবং টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সদস্য সচিব থাকবেন কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক।
এছাড়া সদস্য থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, কক্সবাজারের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ কক্সবাজারের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড কক্সবাজারের একজন প্রতিনিধি ও ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের একজন প্রতিনিধি।
কমিটির কর্মপরিধিতে বলা হয়, জাহাজ ছাড়ার, এন্ট্রি পয়েন্টে শুধু বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অ্যাপ থেকে সংগ্রহ করা ট্রাভেল পাসধারী পর্যটকরা অনুমোদিত জাহাজে ভ্রমণ করতে পারবেন, পর্যটক এবং অনুমোদিত জাহাজে যেন নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী) পরিবহন না করা হয়, পর্যটকরা কে কোন হোটেলে অবস্থান করবেন তার তথ্য সংরক্ষণ করা, জাহাজ ছাড়ার পয়েন্টে এবং সেন্টমার্টিনে এন্ট্রি পয়েন্টে পর্যটকদের জন্য করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়ে বিলবোর্ড বসানো, পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা অফিস সার্বিক যোগাযোগ ও সমন্বয় এবং কমিটি প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভায় সেন্টমার্টিনের বিষয়ে নানা বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আসমা শাহীনের সই পরিপত্রে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হয়।
যেখানে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে নৌ যান চলাচলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে অনুমতি দিতে হবে। নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনের মধ্যেই ফিরে আসতে হবে। কেউ সেখানে রাতে থাকতে পারবেন না।
তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতে থাকা যাবে। যদিও পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি হতে পারবে না। এছাড়া দ্বীপে রাতে আলো জ্বালানো যাবে না, শব্দ দূষণ সৃষ্টি করা যাবে না, বার-বি কিউ পার্টিও করা যাবে না।
এসব বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকা পড়ে ক্ষতির মুখে পড়ের দ্বীপের বাসিন্দারা। এ অবস্থায় মঙ্গলবার কক্সবাজার শহরে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন তারা।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এসব সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ মন্তব্য করে স্থানীয়দের পাশাপাশি হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কর্মীও আন্দোলন করছেন।
তাদের এই আন্দোলনের মধ্যেই সেন্টমার্টিনে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণবিষয়ক কমিটি গঠন করা হলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি বিধিনিষেধের কারণে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা জরুরি প্রয়োজনে কাঠের ট্রলার বা স্পিডবোটে টেকনাফ আসা-যাওয়া করতে পারছেন না। এছাড়া দ্বীপের বাসিন্দাদের টেকনাফে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সেন্টমার্টিনের অন্তত ১২ হাজার মানুষ।
সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, প্রতিবছর অক্টোবরের শেষে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। গত বছর রাখাইন রাজ্যের গোলাগুলির কারণে নাফ নদী দিয়ে জাহাজ চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়। তখন কয়েকটি নৌযানে ওপার থেকে গুলি ছোড়া হয়। এরপর বিকল্প হিসেবে কক্সবাজার শহর ও মেরিন ড্রাইভের ইনানী জেটি দিয়ে কয়েক মাস জাহাজ চলাচল করে। কিন্তু এবার নভেম্বর মাসের শেষ দিকেও জাহাজ চলাচল শুরু না হওয়ায় হতাশ দ্বীপের বাসিন্দারা।