প্রকাশ্যে লুট হচ্ছে মেঘনা-কালাবদর নদীর মাটি

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৮
-6741b54b5a3d6.jpg)
স্থানীয়রা আটক করে মাটি কাটার ভেকু মেশিন ও বাল্কহেড। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
বেশ কিছুদিন ধরেই দেদারচে লুট হচ্ছে বরিশালের হিজলা-শ্রীপুরের কালাবদর ও পার্শ্ববর্তী মেঘনা নদীর মাটি। স্থানীয়রা বলছেন, রাতের আঁধারে নদী থেকে মাটি কেটে ঢাকার ইটভাটায় বিক্রি করছেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মী।
এ অভিযোগের সাথে সরাসরি উঠে আসেছে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির এক সদস্য, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এবং ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতিসহ কয়েকজনের নাম। তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রতি রাতেই নদী থেকে মাটি কেটে ট্রলার এবং বাল্কহেডে পাচার করছেন ঢাকার বিভিন্ন ইটভাটায়।
তবে রহস্যজনক কারণে বিষয়টি নিয়ে নীরব ভূমিকায় ছিলেন উপজেলা প্রশাসন। এমনকি স্থানীয় এবং গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে দফায় দফায় খবর পেয়েও আইনগত ব্যবস্থা নেননি তারা। যদিও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন জব্দ করেছে মাটি কাটার একটি ভেকু মেশিন এবং একটি বাল্কহেড।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, জাঙ্গালিয়া ও চরগোপালপুরে ইউনিয়নের দক্ষিণ পার্শ্বে শ্রীপুরের পাশ ঘেরা কালাবদর ও মেঘনার ইলিশা নদীর পাশে খাস জমির তিন-চারটি স্পট থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে গত কয়েকদিন ধরে মাটি কেটে নিচ্ছেন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য মনতাসির মামুন সোহাগ, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মিজানুর রহমান গাজী, শ্রীপুর ইউনিয়নের যুবদল নেতা নুরুজ্জামান উজরাত। নেপথ্যে থেকে এ কাজে তাদের সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক দীপেন জমাদ্দার ও উত্তর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সালাউদ্দিন পিপলুর বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে ভোর রাত ৪টা পর্যন্ত মাটি কেটে বাল্কহেডে করে ঢাকায় কয়েকটি ইটভাটায় পাচার করা হচ্ছে। বিনিময়ে প্রতি রাতে তিন লাখ টাকা করে পাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। এ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে ভাগ দেওয়ার গুঞ্জণও রয়েছে। আর এ কারণেই মাটি কাটার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে বার বার জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য মনতাসির মামুন সোহাগ। এমনকি সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্নভাবে লবিং-তদবির শুরু করেন।
অপরদিকে জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মিজানুর রহমান গাজীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। পরে প্রতিবেদকের হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বরে ফোন দিয়ে বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, মাটি কাটা হচ্ছে। তবে আমি জড়িত নই, এলাকার ছোট ভাইরা কাটছে। আপনার বিকাশ নম্বর কোনটা দেন, ওদের সাথে কথা বলে আপনার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
এদিকে, নদীর তীর থেকে প্রকাশ্যে বালু কেটে বিক্রি করার বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিক এবং স্থানীয়রা মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেককে মুঠোফোনে অবগত করেন। তিনি থানার ওসিকে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান। কিন্তু সেই রাতেই দুটি বাল্কহেডে করে ঢাকায় বালু নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি শুক্রবার রাতেও মাটি কাটার কাজ শুরু করেন বিএনপি নেতারা।
শুক্রবারও বিষয়টি অবগত করতে যোগাযোগ করা হয় হিজলা এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারদের সাথে। কিন্তু তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
পরে যোগাযোগ করা হয় হিজলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদের সাথে। জাঙ্গালিয়া ও চরগোপালপুরে মাটি কাটার বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেন। এমনকি সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ বিষয়ে তাকে কিছু জানায়নি বলে জানান। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।
এদিকে, উপজেলা প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় বরিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি জানান, যারা জড়িত তাদের এলাকাবাসীদের প্রতিহত করতে হবে। প্রশাসন তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। তাছাড়া এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেবেন বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে রাতেই স্থানীয়রা ধাওয়া করে মাটি কাটার একটি ভেকু মেশিন ও একটি বাল্কহেড আটক করে। পরে রাতে উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়। তাছাড়া এ বিষয়ে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেছার উদ্দিন।