৫ দিন ধরে বেনাপোলে বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে ভারত ফেরা যাত্রীরা

বেনাপোল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:২৯

বেনাপোল পৌর বাস টার্মিনাল। ছবি: প্রতিনিধি
পাঁচদিনেও কোন সমঝোতা না হওয়ায় বেনাপোল থেকে ঢাকাসহ দুরপাল্লার সকল পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়তে হচেছ পাসপোর্টযাত্রীদের। বিকল্প ব্যবস্থায় অনেকে অতিরিক্ত খরচ করে বাড়ি ফিরছেন। ভারতফেরত অনেক যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে নাভারণ সাতক্ষীরা মোড় থেকে সাতক্ষীরা-ঢাকা রুটে চলাচল করা গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন।
আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) থেকে সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে বাস মালিক সমিতি এবং পরিবহন শ্রমিকরা। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
গত শুক্রবার বেনাপোল থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থান থেকে বেনাপোলগামী পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন ব্যবসায়ী সমিতি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বাস মালিকদের আলোচনা সভা হলেও কোন সমাধান হয়নি।
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, তারা কেন যে ধর্মঘট ডেকেছে সে বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি।
এদিকে পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রশাসনের সাথে বৈঠকের পর থেকে সকল পরিবহনের বাসগুলো পৌরসভার নির্দেশনা মত চলছিল। ঢাকা থেকে রাতে ছেড়ে আসা বাসগুলো যাত্রীদের বেনাপোল চেকপোস্টে নামিয়ে দিয়ে খালি বাস পৌর বাস টার্মিনালে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে গত শুক্রবার রাত ৩টার দিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বাসগুলো আসার পর বাসের যাত্রীদের জোরপূর্ব টার্মিনালে নামিয়ে দেয়া হয়। এ সময় যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং হয়রানির শিকার হয়। পরে সেই যাত্রীরা লোকাল বাসে করে চেকপোষ্টে পাঠান টার্মিনালে থাকা পৌরসভার লোকজন।
কোন কিছু না জানিয়ে প্রশাসনের এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে বাস মালিক সমিতি পাঁচ দিন ধরে সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বেনাপোল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাস চলাচল।
এদিকে গতকাল সোমবার যশোর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে উভয়পক্ষের মধ্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দুই পক্ষই তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় কোন সমঝোতা হয়নি।
প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে যানজট নিরসনে নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা সাহেবের নির্দেশে এটা করা হয়েছে। উপদেষ্টার নির্দেশ ব্যতিত আমাদের পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব নয়। পৌর টার্মিনাল থেকেই যাত্রী ওঠাতে হবে এবং নামাতে হবে।
অপরদিকে পরিবহন মালিক সমিতি থেকে বলা হয়েছে আগের নিয়মে বাস চলাচল করতে হবে। তা না হলে তারা বাস চলাচল বন্ধ রাখবে।
যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু বলেন, কয়েকদিন আগে শার্শা ইউএনও ও সুধী সমাজের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়। সেখানে যানজট নিরসনে পরিবহনগুলো নতুন পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী আমরা এই টার্মিনাল ব্যবহার করছি। তবে, যাত্রী হয়রানি ও নিরাপত্তার জন্য শেষরাতের দূরপাল্লার পরিবহনগুলো যেন সীমান্ত ঘেঁষা পুরনো টার্মিনালটি ব্যবহার করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর কোন সমঝোতা হয়নি। যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ হয়রানির হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনঢ় রয়েছি।
ভারত ফেরত যাত্রী ইমরান হোসেন বলেন, ভারত থেকে দেশে ফিরে এখন দেখছি দুর্ভোগের শেষ নেই। পরে তিন জন মিলে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে যশোর যাচ্ছি। সেখান থেকে পরিবহণ ধরে বাড়ি যাবো।
জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজীব হাসান বলেন, কী কারণে তারা (পরিবহন মালিক-শ্রমিক) ধর্মঘট ডেকেছে, আমরা সে বিষয়ে অবগত নই। তাদের কোনোকিছু বলার থাকলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, নতুন পৌর বাস টার্মিনালের নিরাপত্তার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন, নারী-পুরুষের জন্যে পৃথক নামাজের স্থান, ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্যে কর্নার সবকিছুই রয়েছে। আমরা বলেছি, পাসপোর্টযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তারা চেকপোস্টে যাত্রী নামিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু কোন পরিবহণ আমরা সেখানে থাকতে দেবো না।