শেরপুর জেলার সদর উপজেলার লছমনপুর গ্রামের মুর্শিদপুর খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবার শরীফের মুরিদ ও স্থানীয় জামতলা মাদ্রাসার ছাত্রশিক্ষক এবং তৌহিদী জনতার মধ্যে বেশকিছু দিন বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে গত ২৬ নভেম্বর এক রক্তক্ষয়ী সংর্ষের ঘটনায় লছমনপুর কান্দা শেরীরচর গ্রামের হাফেজ উদ্দিন নিহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। 

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নিহত হাফেজ উদ্দিনের জানাজার নামাজে আসা অংশগ্রহণকারী তৌহিদী জনতা ওই দরবার শরীফে হামলা চালায়। এসময় তারা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও তান্ডব চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। 

এদিকে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা বৃহস্পতিবার ভোর সকাল থেকেই মুর্শিদপুর দরবার শরীফ এলাকায় এবং কুসুমহাটি বাজার এলাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শক্ত অবস্থান নেয়। 

অপরদিকে নিহত হাফেজ উদ্দিনের জানাজার নামাজের জন্য পূর্বের নির্ধারিত সকাল ১০টায় কুসুমহাটি জমশেদ আলী কলেজ মাঠে তৌহিদী জনতা অংশগ্রহণ করেন। এসময় জানাজার নামাজে বক্তারা সবাইকে শান্ত এবং ধৈর্য্য ধারণ করতে বলা হলেও তৌহিদী জনতা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। 

পরে তারা মুর্শিদপুর দরবার শরীফের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষুদ্ধদের বাধা দিলে তারা লাঠিসোঁটা, দাঁ এবং ধারালো অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিকল্প সড়ক দিয়ে দরবার শরিফের গিয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও তাণ্ডব চালায়। এছাড়াও দরবার শরিফের সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে যায়।

জানাজার নামাজের আগে বক্তারা বলেন, আহতদের মধ্যে হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় যারা হ্যান্ডকাফ পরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে তাদেরকে হ্যান্ডকাফ খুলে দেয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দোজাপীরকে গ্রেপ্তার করা না হলে তৌহিদী জনতার পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে এমনটাই হুমকি প্রদর্শন করেন। 

এদিকে নিহত হাফেজ উদ্দিনের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের পক্ষ থেকে হত্যকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানানো হয়।

এবিষয়ে দরবারের অন্যতম খাদেম মো. ইলিয়াছ বিকেলে বলেন, ‘জনতার হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে আমাদের প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় আমরা দরবার শরিফের পরিবর্তে অন্যত্র অবস্থান করছি।’

এসময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, হতাহতের ঘটনা এড়াতে কয়েক হাজার মানুষের ওপর কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এসব ঘটনার ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ অভিযোগ দিলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, কাঠমিস্ত্রি হাফেজ উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।