--28--11--2024-6748a2118af45.jpg)
নামের ভুলে জেল খাটেন দিনমজুর মাহাবুল। ছবি: ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
কথায় বলে- নামে নামে, যমে টানে। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহের মহেশপুরে। মাদক মামলার আসামি মাহাবুবের জায়গায় দিনমজুর মাহাবুলকে ধরে আদালতে চালান দিয়েছে মহেশপুর থানার সহযোগিতায় দামুরহুদা থানার এসআই মেজবাহুর রহমান।
তবে আসামি শনাক্তে ভুল হওয়ার ব্যাপারে থানা পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দিলে ১৩ দিন পর দিনমজুর মাহাবুলকে আদালত জামিনে মুক্তি দেন।
জানা গেছে, ভুলক্রমে গ্রেপ্তার হওয়া দিনমজুরের নাম মাহাবুল (২৮)। তিনি মহেশপুর উপজেলার মাইলবাড়িয়া পশ্চিমপাড়ার শাহার আলমের ছেলে। অন্যদিকে মাদক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামির নাম মাহাবুব হোসেন। তার পিতার নাম আলী বক্র। তার বাড়িও একই গ্রামে। আসামি মাহাবুব একজন মাদক ব্যবসায়ী।
আসামি এবং দিনমজুর দুজনের নিজের নামের মিল থাকলেও তাদের বাবার নাম ও মায়ের নাম আলাদা। তবে পরিবারের অভিযোগ- গ্রেপ্তারের সময় দিনমজুরের পরিবার ও এলাকাবাসীর কারো বক্তব্য শোনেননি এস আই মেজবাহুর রহমান।
ভুক্তভোগী মাহাবুল অভিযোগ করে বলেন, দুপুরের দিকে কাজ থেকে ফিরে ভাত খেতে বসেছি ঠিক সেসময় মহেশপুর থানার সহযোগিতায় দামুড়হুদা থানার এস আই মেজবাহুর রহমানসহ ২-৩ জন পুলিশ এসে তাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যান। এ সময় পরিবারের লোকেরা ও এলাকাবাসী পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আপত্তি করেন। দিনমজুর মাহাবুলের নামে কোনো মাদক মামলা নেই বলেও তারা দাবি করেন।
তবে পুলিশ তাদের কোনো কথাই শুনতে চাননি। আটকের পরদিন তাকে চুয়াডাঙ্গা আদালতে তোলা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৯ নভেম্বর দুপুরের দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা উপজেলার ইশ্বরচন্দ্রপুর এলাকা হতে ১০০ বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিলসহ মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে শুকুর আলীকে আটক করে বিজিবি।
সেই মামলায় পলাতক দেখানো হয় নাটোর জেলার জয়কেষ্টপুর গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে আজবার আলী ও মহেশপুর উপজেলার মাইলবাড়িয়া গ্রামের শাহজামানের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী মাহাবুব হোসেনকে। বিজিবির দর্শনা কোম্পানী হাবিলদার শওকত আলী ছিলেন মামলার বাদী।
ফেন্সিডিলসহ আটক হওয়া শুকুর আলী বলেন, আমি মালের জন ছিলাম। মালের আসল মালিক ছিলো মাইল বাড়িয়া গ্রামের মাহাবুব হোসেন। কিন্তু এ মামলায় যে মাহাবুলকে পুলিশ ধরেছে তাকে আমি চিনি না।
স্থানীয় আজিজুর রহমান বলেন, মাহাবুল একজন দিনমজুর। সে কোনোদিন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো না। আমাদের গ্রামে চিহ্নিত একজন মাদক ব্যবসায়ী আছে। তার নাম মাহাবুব। শুধু নামের ভুলে একজন নিরীহ ছেলে ১৩দিন জেল খেটেছে। এখনো সে মামলার হাজিরা দিচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহাবুর রহমান বলেন ,আমাদের গ্রামে মাহাবুব নামে ৪-৫ জন আছে কিন্তু পুলিশ আসল মাদক মামলার আসামীকে না ধরে একজন দিনমজুরকে ধরে নিয়ে যায়। আমরা গ্রামের অধিকাংশ লোক সে সময় পুলিশের কাছে জানায় সে কথা এবং প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার অনুরোধ জানালেও এসআই মেজবাহুর আমাদের কোন কথাই শোনেননি।
মাহাবুলের মা তহমিনা বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ ছিল, তারপরও পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। প্রতিহিংসার কারণে কতিপয় ব্যক্তি পুলিশকে দিয়ে মাদক মামলার মূল আসামীকে না ধরিয়ে নামের মিলে আমার ছেলেকে ধরিয়ে দেয়। আমরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির স্বীকার হয়েছি।
মাহাবুল অভিযোগ করে বলেন, মিথ্যা মাদক মামলায় আমি ১৩ দিন জেল খেটেছি। সে মামলায় ৬ বছর ধরে এখনো হাজিরা দিতে হয়। শুধু মাত্র নামের মিলে মামলার আসল আসামিকে না ধরে প্রতিহিংসার কারণে মাদক মামলার আসামী করে পুলিশ দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আমি এর সঠিক বিচার এবং এই মামলা থেকে মুক্তি চাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা থানার এস আই মেজবাহুরের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
মহেশপুর থানার অফিসাস ইনচার্জ ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার তো ভুল হওয়ার কথা না । তিনি আরো বলেন, আসামি ধরার সময় নাম এবং পিতার নাম মিল থাকতেই হবে।