-copy-6749837452d3a.jpg)
ডা. মুসা কবিরের বৃক্ষ রোপণ কার্যক্রম। ছবি: কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
মানবিক চিকিৎসক ডা. মুসা কবির। স্বপ্ন দেখছেন প্রতিটি গ্রাম যেন ফলদ বৃক্ষে ছেয়ে যায়। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে লাগাচ্ছেন বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ গাছ। ‘সবুজ গড়ি সবুজে বাঁচি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ডা. মুসা কবিরের সহযোগিতায় এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। আর এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে অংশ নিয়েছে স্মাইল ফর অল (এসএফএ) নামক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা।
সম্প্রতি এলাকার গ্রামীণ রাস্তার ধারে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নানা জাতের ৫০০টি গাছের চারা রোপণ করেন ডা. মুসা কবির। চারা রোপণ শেষে ডা. মুসা কবির বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আমাদের চারপাশে সবুজের সমাহার ঘটাতে চাই। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১০ হাজার বিভিন্ন জাতের গাছের চারা রোপণ করব। এরই মধ্যে চার হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো দুই হাজার গাছের চারা শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের মাধ্যমে রোপণ করা হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলার মানুষ ১০ হাজার ফলদ, ঔষধি ও বনজ গাছের চারা লাগানোর মধ্য দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সবুজ অরণ্য গড়তে অবদান রাখবে। পাশাপাশি একেকটা গ্রাম যেন ফলের গ্রাম হিসেবে গড়ে উঠতে পারে- এ জন্য সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। পরিকল্পিতভাবে করলে একটা সময় গোটা উপজেলা বৃক্ষ রোপণে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।’
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লাগানো গাছগুলো বেড়ে উঠেছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফলদ, ঔষধি ও বনজ গাছের চারা লাগানো হচ্ছে। এ জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাছের চারা বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি চারা রোপণ করে যতœ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সংগঠন সূত্র জানায়, এ ধারাবাহিকতায় এ বছর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, সড়কের পাশে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে, বিভিন্ন পরিত্যক্ত-পতিত জমিতে এবং কমিউনিটি ক্লিনিক ও বাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন প্রজাতির ১০ হাজার গাছ লাগানো হবে। এরই মধ্যে চার হাজার গাছের চারা রোপণ করেছে সংগঠনটি। ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা লাগানো হচ্ছে কর্মসূচির অংশ হিসেবে।
গাছ রোপণ নিয়ে আল্লারদর্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মারুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা গাছ লাগাতে পেরে খুবই আনন্দিত। আমাদের দেশ থেকে বেশির ভাগ গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে আমাদের পরিবেশ হুমকিতে পড়েছে। আমরা চাই, আমাদের দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে গাছ লাগিয়ে এ দেশটাকে বাঁচাব। পরিবেশ বাঁচাতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’ অন্তত প্রত্যেককে একটি করে গাছ লাগানোরও আহ্বান জানান তিনি।
পথচারীরাও তাদের এই মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তানজীল হাসান শাহিন বলেন, ‘আমরা দেশের জন্য কিছু করতে চাই। দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। এ জাতির জন্য কিছু করতে চাই। শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে বেশি বেশি করে বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চাই।’ স্মাইল ফর অল (এসএফএ) নামক সংগঠনের সভাপতি আল বুখারী অনিক বলেন, বিগত দুই বছরে চার হাজারের অধিক গাছ লাগানো হয়েছে। শুধু গাছই না, গাছ লাগানো এবং তার পরিচর্যা করার জন্য, খুঁটি, সার, পলিথিন, নেট দিয়ে বেষ্টনী গড়ে তার পরিচর্যা, আবার কোনো গাছ মারা গেলে সেখানে রিপ্লেস করে আবার নতুন গাছ রোপণ করা হয়। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আকাশ বিশ্বাস বলেন, দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে চার হাজারের বেশি গাছ লাগানো হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসএফএর স্বেচ্ছাসেবকরা। আম, জাম, কাঁঠাল, আমড়া, কদবেল, সফেদা, চেরি, জলপাইসহ নানা ধরনের বৃক্ষ রোপণ অব্যাহত রয়েছে। এভাবেই আগামী দিনে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে ফলের বাগান গড়ে উঠলে মানবিক চিকিৎসক ডা. মুসা কবিরের স্বপ্ন পূরণ হবে।