Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

অর্ধকোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের পেছনে কলেজ অধ্যক্ষ

Icon

সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:৩৩

অর্ধকোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের পেছনে কলেজ অধ্যক্ষ

বিয়াশ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি: সিংড়া প্রতিনিধি

নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিয়াশ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজমুল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে অর্ধ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। নিয়োগের টাকায় জমি ক্রয়, বাড়ি করারও অভিযোগ তাদের। 

কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের শ্রম এবং অর্থের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত কলেজ থেকে প্রতারিত হয়েছে প্রায় ৮ থেকে ১০ জন যুবক। এখন তারা ফিরে পেতে চায় তাদের চাকরি নইলে শ্রম, ঘাম এবং অর্থ। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ নাটোর জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেছেন অধ্যক্ষ রানা। এর আগে তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থেকে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আস্থাভাজন হন। তারপর কিছু যুবক, তরুণদের নিয়ে ২০১০ সালে গড়ে তোলেন বিয়াশ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ২০১৯ সালে কলেজটি এমপিওভুক্তি লাভ করলে সম্পূর্ণ গোপনে সব নিয়োগ কার্যক্রম করেন। এতে সহযোগিতা করেন অধ্যক্ষ নাজমুল ইসলাম রানার বাবা। তাকেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করে নিয়োগ কার্যক্রম গোপনে সম্পন্ন করেন। 

জানা যায়, ২০১০ সালে উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিয়াশ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন নাজমুল ইসলাম রানা। সভাপতি করেন তারই বাবা বাচ্চুকে। 

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারই বাবাকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রেখে সব দুর্নীতি, অনিয়ম করেন। তার চাচা শারফুল ইসলাম সেন্টু কে ২০১০ সাল থেকে বিদ্যুৎসাহী সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। অধ্যক্ষের স্ত্রী শিউলী খাতুন কে গোপনে বাংলা প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধি করা হয়।

ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য করা হয় সাবেক ইউপি সদস্য আ. মান্নান এবং তার স্ত্রী নাদিরা বেগম অভিভাবক সদস্য করা হয়। ২০১৪ সালে তাদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে মনগড়া কমিটি করেন অধ্যক্ষ। তারপর থেকে পছন্দের লোক নিয়ে প্রতিষ্ঠাকালিন শিক্ষক, কর্মচারীদের বাদ দিয়ে নিয়োগ শুরু করেন। নিয়োগ বাণিজ্যের টাকায় সিংড়া পৌর এলাকার সরকার পাড়ায় ১টি বাড়িসহ ১০ শতাংশ জায়গা ক্রয় করেন। চাঁদপুর মহল্লায় ৬ শতক জমি ক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। তার চাচা পেট্রোবাংলায় একটি দুই তলা বিশিষ্ট কোটি টাকার ভবন নির্মাণ করেছেন। তার বাবারও একটি চার তলা ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। 

খোলাবাড়িয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আ. মান্নান বলেন, আমরা ৫০ শতক জমি স্কুলে দান করি। আমার ছেলে নাইমকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দেয়ার কথা ছিল। অথচ দেয়নি। অধ্যক্ষের ছোট ভাই নাইমুল ইসলাম রনিকে ওই পোস্টে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এছাড়া যাদের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার পরও বাদ দেয়া হয় এমন কয়েকজন মো. জাহিদুল ইসলাম, তাকে ২০১০ সালে বাংলা প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে ঐ পদে অধ্যক্ষের স্ত্রী শিউলী খাতুনকে নিয়োগ দেয়া হয়। 

ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে ২০১৬ সালে শিপন আলীকে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি ৫ লাখ টাকা অধ্যক্ষ ও সহযোগীদের দেন।

২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত সহ যাবতীয় কার্যক্রম করলেও পরে তিনি জানতে পারেন তার স্থলে রনি নামে একজন কে বড় ধরনের উৎকোচের বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সোহেল রানা কে নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেয়। তার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। সে ২০১০ সাল থেকে কলেজে যাতায়াতসহ সব কার্যক্রমে অংশ নিলেও তার বিপরীতে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়। তার কাছ থেকে ও বিপুল অর্থ গ্রহণ করে। সোহেল রানা জানতে পারেন তাকে বাদ দেয়া হয়েছে।

এরশাদ আলী ২০১০ সালে কম্পিউটার প্রদর্শক পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই পদে অন্য একজনকে বড় অংকের বিনিময়ে চাকরি দেয়া হয়। ২০১০ সাল থেকে মাহবুব আলম কে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগের কথা বলে ৫ লাখ টাকা নিয়ে ওই পদে অন্যজনকে নিয়োগ দেয়। সে ২০২২ সাল পর্যন্ত কর্মরত থাকার পর জানতে পারেন এমপিও তালিকায় তার নাম নেই।

শারমিন আক্তারকে সহকারী গ্রন্থাগার পদে ২০১৫ সালে নিয়োগ দেয়া হয়। তার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে ওই পদে অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এমদাদুল হক মজনু কে দপ্তরী পদে নিয়োগের কথা বলে ৩ লাখ টাকা নেন কলেজের অধ্যক্ষ। ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কর্মরত থাকার পর তিনি জানতে পারেন তার বদলে আবুল কালাম আজাদ নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ নাজমুল ইসলাম রানা বলেন, আমি যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তাদের টাকা ফেরত দিয়েছি। এখন অযথা হয়রানি করার জন্য বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুর রহমান বলেন, আমি একটা অভিযোগ পেয়েছি। বিস্তারিত জানার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫