Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

তামাক চাষে ঝুঁকছে কৃষক, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

Icon

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:০৫

তামাক চাষে ঝুঁকছে কৃষক, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

তামাক চাষ। ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি

বিষবৃক্ষ তামাক চাষে ঝুঁকছে লালমনিরহাটের কৃষকরা। কম খরচে অধিক লাভের আশায় দেশি-বিদেশি তামাক কোম্পানির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তারা তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এতে কৃষক পরিবারেও দিন দিন বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

জানা গেছে, কয়েকটি দেশি-বিদেশি তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিরা স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে উৎসাহিত করছে। বাণিজ্যিকভাবে চারটি জাতের তামাকের চাষ করা হয়। এগুলো হলো- এফসিভি, মতিহার, জাতি ও বার্লী। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ঢাকা টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো, আবুল খায়ের টোব্যাকো, নাসির টোব্যাকো, আকিজ টোব্যাকোসহ বেশ কয়েকটি তামাক কোম্পানির বীজ, সার ও অগ্রিম ঋণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তামাক চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলছে। এ কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহযোগিতা ও বিনামূল্যে বীজ, ঋণ, সার ও নগদ অর্থসহ তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তার কারণে লালমনিরহাটে তামাক চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মূলত কৃষি বিভাগের উদাসীনতা, তামাক উৎপাদনের আগে কোম্পানিগুলোর দর নির্ধারণ, বিক্রির নিশ্চয়তা, চাষের জন্য সুদমুক্ত ঋণ, কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও পরামর্শ দান- তামাক চাষ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। গত কয়েক বছর আগেও লালমনিরহাটের যেসব আবাদি জমিতে শীতকালীন মৌসুমে ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা ও আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়েছিল এখন সেসব জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলাসহ তিস্তা নদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে দিন দিন বেড়েই চলেছে তামাকের চাষ। নারী-পুরুষ ও ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের দিয়ে চলছে তামাক পরিচর্যার কার্যক্রম। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকজুড়ে জেগে ওঠা চরের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হওয়া ফসলের মধ্যে বেশিরভাগ চাষ হচ্ছে তামাক। 

লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক আকবর আলী (৪২) জানান, বিএটিসি সিগারেট কোম্পানির মাধ্যমে তামাক চাষিদের জন্য একর প্রতি জমিতে বীজ বাবদ ৩৬০০ টাকা দেওয়া হয়। সেই সাথে ইসুবি সারের জন্য ৬০০০ হাজার টাকার সার আগাম দেওয়া হয়। এছাড়া উৎপাদিত তামাক সঠিক মূল্যে কৃষকের বাড়ি থেকে কেনার নিশ্চয়তা দেওয়া হয় তাদের। যে কারণে এলাকায় রবি মৌসুমে বেড়ে চলেছে তামাকের চাষ। প্রশাসনের তেমন কোন পদক্ষেপ না থাকায় তৃণমূল পর্যায়েও বেড়েছে এর চাষাবাদ।

সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের কৃষক মো. মনোয়ার হোসেন (৩৯) বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তামাক আবাদ করি। এবার ভেবেছিলাম আলুর আবাদ করব কিন্তু আলুর বীজের যে দাম তার সঙ্গে সার কীটনাশকের খরচ তো আছেই। তাই এবারও তামাক কোম্পানি থেকে টাকা নিয়ে তামাক চাষ করছি।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতলের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, তামাক চাষ ও সেবন মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তামাক পাতার বিড়ি, সিগারেট, গুল, খইনি ও জর্দাসহ নানান ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করায় হাসপাতাল গুলোতে দিন দিন শ্বাসকষ্ট, চর্ম, ও ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তামাক চাষে কৃষকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও রয়েছেন সাধারণ মানুষ।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, গত বছর লালমনিরহাটে প্রায় ৯ হাজার হেক্টরে বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। চলতি বছরে তার থেকেও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি জমিতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তামাক চাষ অত্যান্ত ক্ষতিকর। তবে তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কৃষকদের বিনামূল্যে তামাকের বীজ, সারসহ ঋণ দেয়ায় তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। তবে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে এবং এর কুফল সম্পর্কে অবগত করতে কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত কৃষকদের সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫