তাহিরপুরে বন্ধ হচ্ছে না চোরাচালান, বিদেশি অস্ত্রসহ আটক ৩

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:২৫

জাদুকাটা নদী দিয়ে পাথর চোরাচালান ও বিদেশি রাইফেলসহ বিজিবির হাতেে আটক ৩ চোরাকারবারি। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে বন্ধ হচ্ছে না চোরাচালান। এই উপজেলার জাদুকাটা নদী, বর্ডার বাজার, বারেক টিলার আনন্দপুর, কড়ইগড়া, রাজাই, রজনী লাইন, বুরুঙ্গা ছড়া, নীলাদ্রী লেকপাড়, খনি প্রকল্প, লাকমা, লালঘাট, চারাগাঁও এলসি পয়েন্ট, কলাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি, লামাকাটা, সুন্দরবন, কচুয়াছড়া পয়েন্টকে নিরাপদ রোড হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহার করছে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারিরা।
তারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ওই সব পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন কয়লা, পাথর, চিনি, ঘোড়া, নাসির উদ্দিন বিড়ি, কসমেটিক্স, অস্ত্র ও মাদকদ্রব্যসহ লাখ লাখ টাকার মালামাল পাচার করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, আজ শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাউড়গড় সীমান্তের ১২০৩-এর ৩-এস পিলার ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে আনুমানিক ১০ লাখ টাকার পাথর পাচার করে। প্রতিদিনের মতো আজও ৩-৪শ লোক লুকিয়ে ভারতে গিয়ে পাথর বয়ে এনে বিজিবি ক্যাম্পের পাশের লাউড়গড় বাজারের চারপাশে মজুত করে রাখে। ঠেলাগাড়ি দিয়ে এসব পাথর বহন করে চোরাকারবারিরা। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।
অন্যদিকে এটাও জানা যায়, গতকাল শুক্রবার (৬ ডিসেম্ভর) রাত ১২টা থেকে জাদুকাটা নদীপথে ভারত থেকে ৪-৫ শ’ বারকি নৌকা দিয়ে কয়লা-পাথরসহ চিনি, ফুচকা, কসমেটিক্স ও মাদকদ্রব্যসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল পাচার করা হয়।
এছাড়া গত ৩ দিনে পাশ্ববর্তী চাঁনপুর সীমান্তের আনন্দপুর ও ১২০৩-পিলার এলাকা দিয়ে ভারত থেকে ফুচকা, চিনি, কম্বল, নাসির উদ্দিন বিড়ি, ঘোড়া, কমলা ও মদসহ প্রায় কোটি টাকার মালামালপাচার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে সূত্র।
টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গা, রজনীলাইন, নীলাদ্রী লেকপাড়, বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা, লালঘাট, চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, এলসি পয়েন্ট, কলাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি এলাকা দিয়ে লাখ লাখ টাকার কয়লা ও মাদকদ্রব্য পাচার হচ্ছে বলেও জানা যায়।
এসব গোপন তথ্য পেয়ে গতকাল শুক্রবার (৬ ডিসেম্ভর) দুপুরে টেকেরঘাট সীমান্তের বড়ছড়া শুল্ক স্টেশনে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় ১টি রাইফেলসহ জালাল মিয়া (২০), রাজু মিয়া (২০) ও রাসেল মিয়া (২০) আটক করে বিজিবি।
আটক তিনজন বড়ছড়া সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা বলে জানানো হয় বাহিনীর পক্ষ থেকে।
রাতে সুনামগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে বিজিবির সিলেট সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, নাজমুল নামের এক যুবক তাহিরপুর উপজেলা সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর জন্য একটি লং রেঞ্জ শুটিং রাইফেল অবৈধভাবে ভারত থেকে নিয়ে এসেছে। সেই অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার আগেই আমরা তার ৩ জন সহযোগীকে আটক করেছি। রাইফেলটি জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি, সন্ত্রাসী নাজমুলকে আটকের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর ভোরে চাঁনপুর সীমান্তের বারেক টিলার আনন্দপুর ও ১২০৩-পিলার সংলগ্ন বড়গোঁফ নামকস্থানে অভিযান চালিয়ে ৬টি ডেটেনেটর ও ৬টি বিস্ফোরক উদ্ধার করে র্যাব। এছাড়াও এই সীমান্তে অস্ত্র নিয়ে চোরাকারবারীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী টেকেরঘাট সীমান্তের রজনী লাইন এলাকা থেকে ৪৪ পিস ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, ৬২ পিস কেলভেক্স ও ১৫ বোতল মদসহ আবুল কাসেমকে (২৮) আটক করে বিজিবি।
ওই বছরের ১৭ মার্চ টেকেরঘাট নীলাদ্রী লেকপাড়ের কোয়ারি থেকে অভিযান চালিয়ে গুলিভর্তি বিদেশী রিভলবারসহ শহিদ মিয়াকে (৩৫) আটক করে র্যাব। তাছাড়া লাউড়গড় সীমান্তের জাদুকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে কয়লা ও পাথরসহ বিভিন্ন মালামাল পাচার করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে ও নদীতে ডুবে এ পর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে।