মিয়ানমারে যুদ্ধ, এপারে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:৪৬

টেকনাফ সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি
মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। টেকনাফ সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চল এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে।
সেখানকার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে মরিয়া জান্তা বাহিনী একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে স্থলে তাদের হয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সামনাসামনি লড়াই করছে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।
সেখানে একের পর এক বিস্ফোরণ ও গুলির তীব্র বিকট শব্দ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্ত জনপদ টেকনাফে। শীতের রাতে ঘর ছেড়ে বাহিরে রাত পার করছেন অনেকে।
টেকনাফের স্থানীয়রা জানান , মিয়ানমারে একের পর এক বিস্ফোরণের বিকট শব্দে তাদের ঘরবাড়ি পর্যন্ত কেঁপে উঠছে। এতে আতঙ্কে রাতে তারা ঘুমাতে পারছেন না। এমনকি আতঙ্কে অনেকে ঘর ছেড়ে এই শীতের মধ্যেও বাইরে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে টানা বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েছেন তারা। এরপর কিছু সময় বিরতি দিয়ে শনিবার ভোর ৪টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ আসে।
তারা জানান, বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে টেকনাফ পৌর ও সদর এলাকার পাশাপাশি সাবরাং ইউনিয়ন ও শাহপরীর দ্বীপ। এসময় মিয়ানমারের আকাশে যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন জানান, মিয়ানমারের মংডু শহরের দক্ষিণ দিকের গ্রামগুলো থেকে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে টেকনাফে। মর্টারশেল ও গ্রেনেড হামলার শব্দে কেঁপে উঠছে এপারের বসতবাড়ি। বিস্ফোরণের শব্দে নির্ঘুম রাত কাটছে স্থানীয়দের।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের ধারণা, মংডু শহরের দক্ষিণে উকিলপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সিকদারপাড়া, হারিপাড়া ও ফাতংজা এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেওয়া আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ছে জান্তা বাহিনী।
বিস্ফোরণের শব্দে বাড়িঘর কেঁপে ওঠায় আতঙ্কে সীমান্ত এলাকার অনেকে শীতের রাতেও ঘরের বাইরে রাত কাটিয়েছে বলে জানান টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের নয়াপাড়ার বাসিন্দা মো. ইসলাম।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ ও শাহপরীর দ্বীপ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালামও একই কথা বলেন। তারা জানান, সীমান্তের ওপার থেকে আসা বিকট বিস্ফোরণের শব্দে টেকনাফের লোকজন আতঙ্কে আছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে ব্যবহ্নত ভারি অস্ত্রের বিকট শব্দে টেকনাফ সীমান্তে ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে।
ইউএনও আরও বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশকারী যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারির পাশাপাশি টহল জোরদার রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।