Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

পুঠিয়ায় টাকা ছাড়া মেলে না ইপিআই টিকাকার্ড

Icon

পুঠিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২০

পুঠিয়ায় টাকা ছাড়া মেলে না ইপিআই টিকাকার্ড

ইপিআই টিকাকার্ড। ছবি: পুঠিয়া প্রতিনিধি

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় গত কয়েক মাস আগে জন্ম নেওয়া অধিকাংশ শিশুর টিকাদানের পর মিলছে না তার টিকাকার্ড। ফলে জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন অভিভাবকরা।

অপরদিকে ভালুকগাছি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড ফুলবাড়ী আবুলের মোড় এলাকায় নবজাতকের অভিভাবকদের কাছে ইপিআই টিকা কার্ড ৫০০ টাকায় বিক্রির সময় স্থানীয় জনগণের কাছে ধরা পড়েছেন স্বাস্থ্য সহকারী মোতাহার। তবে ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশিদুল হাসান শাওন বলেন, টাকা নিয়ে কার্ড বিক্রি করছে এমন ঘটনা শুনেছি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত স্বাস্থ্য সহকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যদি লিখিত অভিযোগ না আসে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব না।

তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে পর্যাপ্ত টিকাকার্ড আছে এবং চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সহকারীদের তা সরবরাহ করা হচ্ছে। যদি কোনো নবজাতকের অভিভাবক টিকা কার্ড না পেয়ে থাকেন এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত নভেম্বর মাসে সরেজমিনে সাব-ব্লক খ/১ কেন্দ্রে কথা হয় বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে। তারা জানান, সরকারের দেওয়া টিকাকার্ড বিনামূল্যে না পেয়ে বাধ্য হয়ে তারা প্রতিটি কার্ড ৫০০ টাকার বিনিময়ে কিনে নেন। টাকা না দিলে দীর্ঘদিন ভোগান্তি পোহাতে হয় এমনি অভিযোগ স্থানীয়দের। টাকা ছাড়া কোন ইপিআই টিকাকার্ড হয় না। টিকাকার্ড চাইলে বলেন ফুরিয়ে গিয়েছে। আর এভাবেই আজ-কাল করে মাসের পর মাস ঘুরায় এই মোতাহার হোসেন।

ঘটনার দিন বলেছিল কার্ড শেষ পরে নবজাতকের অভিভাবক দুলালকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলে কার্ড নিতে ৫০০ টাকা লাগবে! এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগী দুলালের। ঘটনার পর স্থানীয় কয়েকজন উপস্থিত হয়ে ঘুষ গ্রহণের সময় ধরে ফেলে অভিযুক্ত স্বাস্থ্য সহকারীকে। পরে স্বাস্থ্য সহকারী অর্থের বিনিময়ে টিকা কার্ড বিক্রির কথা উপস্থিত সকলের সামনে স্বীকার করেন। এসময় উপস্থিত অনেকেই মুঠোফোনের ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি পোস্ট করেছেন। সেই ঘটনার পর থেকে ইপিআই টিকা ও টিকাকার্ড সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামবাসীদের মাঝে।

ঠিক সময়ে শিশু ও মাকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করাই স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের অন্যতম সাফল্য। দেশের মানুষকে টিকা দিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি কুড়িয়েছে। এই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন ‘ভ্যাকসিন হিরো’ হিসেবে পুরস্কৃত হয় বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৯ ও ২০১২ সালে ‘গাভি বেস্ট পারফরম্যান্স’ পুরস্কার পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পুঠিয়ায় নবজাতকদের টিকা দেওয়ার পর বিড়ম্বনায় পড়ছেন অভিভাবকরা। টিকাদানের পর টাকা দিয়ে নিতে হচ্ছে টিকাকার্ড।

ফুলবাড়ী গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে দুলাল বলেন, এলাকায় ইপিআই টিকাদানের পর স্বাস্থ্য সহকারীকে টাকা না দিলে কার্ড পাওয়া যায় না। কার্ড নিতে গেলেই কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা বলেন ইপিআই টিকাকার্ড নাকি টাকা দিয়ে কিনতে হবে। প্রতিটি কার্ড সে ৫০০ টাকা করে বিক্রি করে।

ফুলবাড়ী বাজার সংলগ্ন এলাকার শাওনের স্ত্রী বলেন, গত ১ বছর যাবত টিকাকার্ড দিবে বলে কিন্তু দেয় না। এখনো আমি সেই কার্ড পাইনি। এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত মোতাহার বলেছে ৫০০ টাকা দিলে তাড়াতাড়ি পাবো আর না দিতে পারলে কয়েকদিন সময় লাগবে কার্ড পেতে। এখন কার্ডের খুবই সংকট। ‘আমার শিশুর টিকা দেওয়া হয়েছে ১ বছর আগে কিন্তু কার্ড পাইনি। হাতে সাদা কাগজে স্লিপ দিয়েছেন শুধু। জন্মনিবন্ধনের জন্য শিশুর ইপিআই টিকাকার্ড আমার খুবই জরুরি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী জানান, আমার মেয়ের বয়স দুই মাস। শিশুর তৃতীয় ডোজ টিকা দিয়েছি। টিকাকার্ড চাইলে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারী মোতাহার তাকে জানান, টিকা কার্ডের সরবরাহ নেই। কার্ড নিতে ৫০০ টাকা লাগবে। পরে টাকা দিয়ে টিকাকার্ড সংগ্রহ করি।

তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত স্বাস্থ্য সহকারী মোতাহারের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি তার স্ত্রী-সন্তানদের দিয়ে কল রিসিভ করায়। পরবর্তীতে আবারো যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি আর কল রিসিভ করেনি।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমটিইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেজাউল ইসলাম জানান, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন কেন্দ্রে শূন্য থেকে ১৫ মাস বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া হয়। সে জন্য মাসে প্রায় ৪৬৫টি নতুন টিকাকার্ডের প্রয়োজন হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে টিকাকার্ড সরবরাহ রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী প্রতিমাসে স্বাস্থ্য সহকারীদের ইপিআই টিকাকার্ড সরবরাহ করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (এইসআই) স্বাস্থ্য পরিদর্শক, আজিজুল হক জানান, আসলে গত তিনদিন আমি অফিসে অনুপস্থিত ছিলাম তাই বিষয়টি তদন্ত করতে পারিনি। তবে ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোনে আমি খবর পেয়েছিলাম।

তিনি আরো বলেন, শিশুদের টিকাদানের পর কার্ড না পাওয়ার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এমনকি টাকার বিনিময়ে ইপিআই টিকাকার্ড দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক স্বাস্থ্য সহকারীর বিরুদ্ধে। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য প্রধান কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে টিকার কার্ড ও টিকা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। টিকাকার্ড বিক্রি করে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫